পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভাগিনী।

কারণ সে আমাকে দেখিলেই দ্রুতচম্পট দিয়া থাকে-অবশ্য গোবরের বুড়িসমেত। মেয়েটি অনিদ্যসুন্দরী, একখানি ময়লা কাপড় পরিয়া মুখখানি হেঁট করিয়া সাজি হাতে গাঁদা গাছের পাশে দাঁড়াইয়াছিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম সে কে এবং তাহার নাম কি। উত্তরে জানিলাম সে গ্রাম্য পোষ্টমাষ্টারের কন্যা এবং তাহার নাম কমলা, মাতার পূজার জন্য ফুল তুলিতে আসিয়াছে। তখন আমার মনে বড় লজ্জা হইল। আমি তাকে অভয় দিয়া বারানায় ফিরিয়া আসিলাম। এক ছিলিম তামাক সাজিয়া যেমন টুলে বসিয়াছি অমনি হাত হইতে হুঁকাটা পড়িয়া গেল, চক্ষু মেলিয়া দেখি বেলা আটটা বাজিয়া গিয়াছে, হরের মা বক্ত পূর্ব্বে বেলতলা হইতে গোবরটুকু সংগ্রহ করিয়া লইয়াছে। তাহার উপর রাগ বাড়িয়া গেল, কারণ তাহাকে ধরিতে ত পারিলামই না; আবার পাঁচ সিকা দামের হুঁকাটা পড়িয়া ভাঙ্গিয়া গেল।

 হরিসাধন বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের গ্রামের পোষ্টমাষ্টার, অতি সদাশয় ভদ্রলোক। তিনি এক বৎসর যাবৎ পরিবার লইয়া আমাদিগের গ্রামে বাস করিতেছেন। তাঁহার পরিবারের মধ্যে স্ত্রী, বিধবা ভগ্নী, কন্যা কমলা এবং শিশুপুত্র। তাঁহার গুণে গ্রামবাসিগণ মুগ্ধ এবং সকলেই কোন না কোন বিষয়ে তাঁহার নিকট ঋণী। বন্দোপাধ্যায় মহাশয় পরম নিষ্ঠাবান হিন্দু, প্রত্যহ পূজা না করিয়া জলগ্রহণ করেন না, শ্রাদ্ধশান্তি নিয়মিত করা আছে, যথাসাধ্য ব্রাহ্মণভোজন করাইয়া থাকেন। মোটের উপর লোকটা মন্দ নহে কিন্তু একটি দোষে লোকটা একেবারে মাটি হইয়া গিয়াছে; বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাটিতে এক ছিলিম তামাক অবধি পাইবার যে নাই।

৪১