গুচ্ছ।
বেহারা প্রাণপণ শক্তিতে বহিয়া অগ্রসর হইতে পারিতেছিল না; তখন আমি ছেঁচা পানটুকু মুখে করিয়া বারান্দায় আসিয়া বসিয়াছি মাত্র। বাঁড়ুয্যে বাড়ী তখন মড়াকান্না উঠিয়াছে, সে আওয়াজ সানাইয়ের সহিত মিশিয়া মন্দ লাগিতেছিল না।
৩
এই পাঁচ বেটার জ্বালায় দেশে কি বাস করিবার যে আছে, না কোন কথা বলিবার উপায় আছে। বাঁড়ুয্যের জামাই মরিল তা ফেলিতে যাইবার লোক আর দেশে পাইল না, গ্রামের মধ্যে ছাই ফেলিতে ভাঙ্গা কুলা আছে হারুখুড়া, ডাক্ তাহাকে। আমার এখন তিন কাল গিয়া এক কালে ঠেকিয়াছে, গঙ্গা-মুখে পা বাড়াইয়াছি, আমার কি ছাই অত মনে থাকে? আমার অপরাধের মধ্যে আমি বলিয়া ফেলিয়াছিলাম যে, “আমার গৃহিণী অন্তঃসত্ত্বা।” গৃহিণী যে আজ বিশ বৎসর আমায় ছাড়িয়া গিয়াছেন তাহা কি আমার মনে ছিল? তাই পাঁচ বেটায় হাসিয়া আমায় মাটি করিয়া দিল, গৃহিণীর দারুণ শোক যে বজ্রের মত আমার বুকে বাজিল, তাহা কি কেহ বুঝিল? আমি রাগে লজ্জায় ঘৃণার কাঁপিতে কাঁপিতে বাড়ীর ভিতর উঠিয়া গেলাম। বাঁড়ুয্যের জামাই বেটার কি আক্কেল, সে বেটা এত দেশ থাকিতে শ্বশুরবাড়ী ভিন্ন মরিবার জায়গা পাইল না। আমার আবার বলিতে কি জান, একটু বয়সটা অধিক হয়েছে কিনা? উপদেবতার নাম করিলে গা-টা যেন কেমন করিয়া উঠে। আমি আর সেদিন ঘরের বাহির হইতে পারি নাই। সন্ধ্যা অবধি রামনাম লিখিয়াছি, পুরাতন রামকবচের মাদুলিটি নতুন সুতায় বাঁধিয়া হাতে পরিয়াছি, অবশেষে অন্ধকার হইয়া আসিলে, যখন গ্রামের ষণ্ডাগুলা বাঁশের