গুচ্ছ।
বসিল। আমার প্রাণ যায় আর কি? এক বেটা বলিল, “ঠাকুরদা কি ঠান্দি খুঁজতে বেরিয়েছ?” আর এক দল বলিল, “ঠাকুরদা, এবার কালাচাঁদ ছেড়ে গাঁজা ধর, তোমার কালাচাঁদের এবার গঙ্গাযাত্রা—শুনেছ ত?” আমার চোক ফাটিয়া জল আসিল, মনে মনে ভাবিলাম গঙ্গাধাত্রার পূর্ব্বে যেন বিশ্বনাথ আমায় দয়া করেন। এমন সময়ে গিরিশ বসুর কুষ্মাণ্ডটা ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিল, তাহাকে দেখিয়া পাষণ্ডের দল সরিয়া দাঁড়াইল। সে যত্নের সহিত আমাকে ঘরের ভিতর লইয়া গিয়া বসাইল, এক ছিলিম তামাক খাওয়াইল, আমার মনটা একটু নরম হইয়া আসিল। ও মহাশয়! বেটা বলে কি? বলে আফিম খাওয়া ছাড়, আফিমে লোকের সর্ব্বনাশ হয়, আফিম খাইয়া চীনের মরিয়া আছে। তখন আমি রাগে থর থর করিয়া কাঁপিতেছি, হাত হইতে হুঁকাটা পড়িয়া গিয়াছে, বেটার কিন্তু তখনও ন্যাকামি, ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তখনও আমার মুখের দিকে চাহিয়া আছে। ক্রোধে কাঁদিতে কাঁদিতে আমি বলিয়া ফেলিলাম “তুই জানিস্ যে, আমার অস্থিতে অস্থিতে, মজ্জায় মজ্জায় আফিম প্রবেশ করিয়াছে!” আমি আর দাঁড়াইতে পারিলাম না, হন হন করিয়া একটানে বাড়ী ফিরিয়া আসিলাম।
গিরিশ বসু নির্ব্বংশ হইল না, কিন্তু সত্য সত্যহ আফিমের দর চড়িতে লাগিল। ঘোর কলি, সবাই বুঝিল কোম্পানী বাহাদুরের মতিচ্ছন্ন ধরিয়াছে, নতুবা দেশে এত জিনিষ থাকিতে আফিমের চাষ তুলিবার বুদ্ধি যোগাইবে কেন? জীবন রায়ের খুড়া বহুকাল অবধি কাশীবাস করিতেছে, বিশ বৎসরের পরে বুড়া দেশে আসিয়া আমার কর্ণে মন্ত্র দিয়া গেল; বলিয়া গেল যে, কাশীবাস ভিন্ন আমার আর গতি নাই। জীবন রায়ের