অভাগিনী।
করিল; তাহার পরেই আগুনে জল ঢালার শব্দ উঠিল; মেজ-বৌ পাশ ফিরিয়া শুইল, বড়-বৌ চীৎকার করিয়া বাড়ী মাথায় করিতে লাগিল। আমার চমক ভাঙ্গিল, দেখিলাম কলিকাটি ঠাণ্ডা হইয়া গিয়াছে। ঘরে ঢুকিয়া চকমকি কিয়া আগুন জ্বালিলাম, তামাকটি টানিতে টানিতে বাহিরে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে উপরে ডাকিলাম। মনে মনে ভাবিলাম, আমিও ত এই বাড়ীতেই থাকি, ব্রাহ্মণকন্যা যদি উপবাসী থাকে আমার অকল্যাণ হইবে। তিনি উপরে আসিলে তাঁহাকে আহার করিতে অনুরোধ করিলাম, তিনি ফুকারিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন, বলিলেন, “হারু দাদা, তুমি কি আমায় চিন্তে পারছ না? আমি যে হরি বাড়ুয্যের মেয়ে কমলা।” সেই অনশনক্লিষ্ট, রূপলাবণ্যহীনা বিধবামূর্ত্তির দিকে চাহিয়া মনে করিলাম আমিও একবার কাঁদি; কিন্তু হৃদয় শুষ্ক, নীরস মরুভূমির মত, চক্ষু তীব্র কঠোর, তাহাতে অশ্রুবিন্দুর স্থান নাই।
বিশ্বনাথ কাশীতে সব করিয়াছেন, কেবল কৈলাসের খানিকটা আনিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। কাশীধামে বড়ই গ্রীষ্ম, যেমন বিপরীত মশা, তেমনই মাছির উপদ্রব। কালাচাঁদের মহিমায় ঘুমত কখনই হয় ন, তাহার উপর ঠিক ঘুমের সময়টীতে কাশীর যত লোকের অদৃষ্টি আগুন লাগিবে। শেষ রাত্রিতে একটু নিশ্চিন্ত হইয়া ঘুমাইবার উপায় নাই, সেই সময় মাগী মর্দ্দ যাত্রায় বাহির হইবে। বিরক্ত হইয়া দশাশ্বমেধ ঘাটে উঁচু চাতালটার উপর বসিয়া আছি। শত শত লোক আসিতেছে, স্নান করিতেছে, ফিরিয়া যাইতেছে। অন্যমনস্ক হইয়া তাহাই দেখিতেছি, এমন সময় ঘাটে এক মাগি আমাকে উদ্দেশ করিয়া চীৎকার করিয়া, ডাকিল “বাবু-বাবু!” -