আহ্বান।
(১)
ইন্দু বালবিধবা। দশ বৎসর পূর্ব্বে তাহার বিবাহ হইয়াছিল। বিবাহের কথা, স্বামীর কথা, তাহার বড় একটা মনে ছিলনা। কেবল মাত্র মনে পড়িত শুভদৃষ্টির কথা, দুইজনে তাহাকে পিঁড়িতে বসাইয়া উচ্চে উঠাইতেছে, সে পড়িয়া যাইবার ভয়ে প্রাণপণ শক্তিতে পিঁড়ি চাপিয়া ধরিয়াছে। তাহার পর কে একখানা কাপড় আনিয়া তাহার মাথার উপরে ফেলিয়া দিল, সকলে তাহাকে ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিতে বলিল, সে দুইতিনবার চেষ্টা করিয়াও চাহিতে পারিলন। তিরস্কৃত হইয়া বহুকষ্টে সে একবার চক্ষু মেলিয়াছিল, তাহাও সত্য সত্যই নিমেষের জন্য। লজ্জা আসিয়া পল্লবে ভর করিল, আঁখি আপনা হইতে মুদিয়া আসিল, যাহারা তাহাকে ধরিয়াছিল তাহারা ক্লান্ত হইয়া পিঁড়ি নামাইয়া ফেলিল, বামা-কণ্ঠ-উত্থিত মঙ্গলধ্বনি তাহার পিতৃগৃহ মুখরিত করিয়া তুলিল। সেই নিমেষে সে যাহা দেখিয়াছিল তাঁহাই তাহার মনে পড়িত, ইন্দু বিবাহের অপর সমস্ত কথা ভুলিয়া গিয়াছিল। সে দেখিয়াছিল নীলেন্দীবরতুল্য দুটি নয়ন সাগ্রহে তাহার দিকে লক্ষ্য করিয়া রহিয়াছে, আর দেখিয়াছিল যে কন্দর্পের শরাসনতুল্য যুগ্ম ভ্রূর উপরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চন্দনবিন্দু শুভ্রললাট রঞ্জিত করিয়াছে।