পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

একজন তন্ময় হইয়া সে গান শুনিতেছিল। সে ভুলিয়া গিয়াছিল যে সে প্রখর রৌদ্রে শিলাখণ্ডের উপরে বসিয়া রহিয়াছে; সে বিস্মৃতা হইয়া গিয়াছিল যে, সে একাকিনী গৃহ হইতে বহুদূরে আসিয়া পড়িয়াছে, জনশূন্য অরণ্যসস্কুল উপত্যকায় সঙ্গীত গুনিয়া সে জ্ঞানশূন্য হইয়াছে। সে দেখিতেছিল যে, বসন্তের পূর্ণিমায় যমুনা-পুলিনে তাহার শ্যামসুন্দর বংশীবাদন করিতেছে। সে গৃহে ফিরিতেছিল, কিন্তু সঙ্গীতের মোহমন্ত্র তাহাকে অহল্যার ন্যায় পাষাণে পরিণত করিয়াছে। সে দেখিতেছিল তাহার বংশীধারী শ্যামসুন্দর, সে দেখিতেছিল কেবলমাত্র দুইটি নীল নয়ন, তাহার উপরে যুগ্ম ভ্রুর ঘন কৃষ্ণ রেখা আর চন্দনচর্চ্চিত ললাট—

“আমার বক্ষে ফিরিয়া এস হে, আমার চক্ষে ফিরিয়া এস!
আমার শয়নে স্বপনে বসনে ভূষণে নিখিল ভূবনে এস।”

 কে যেন গাহিতে গাহিতে দ্রুতপদে বনপথ অতিক্রম করিতেছিল। দূরে গ্রামপ্রান্তে কৃষক বালক গোধূম ক্ষেত্রে দাঁড়াইয়া কম্পিত হৃদয়ে ইষ্টদেবতার নাম স্মরণ করিতেছিল। সে ভাবিতেছিল নিশ্চয়ই তাহার উপর উপদেবতার দৃষ্টি পড়িয়াছে, এমন মধুরকষ্ঠ কখনও কি মানুষের হইয়া থাকে। সঙ্গীত একবার থামিল—আবার শ্যামল তৃণক্ষেত্র ও বনরাজি কম্পিত করিয়া সুধার উৎস উথলিয়া উঠিল—

“আমার মুখের হাসিতে এস হে, আমার চোখের সলিলে এস!
আমার আদরে, আমার ছলনে, আমার অভিমানে ফিরে এস।”

 যে রমণী শিলাখণ্ডের উপরে বসিয়া মুগ্ধ হইয়া সঙ্গীতসুধা পান করিতেছিল, তাহার পরিচ্ছদ দেখিলে বঙ্গদেশবাসিনী বলিয়া বোধ হয়, বেশ দেখিলে বোধ হয় সে হিন্দুর ঘরের বিধবা। বনমধ্যে গায়ক যেদিকে

৫৪