পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

লইয়া অনেকক্ষণ বসিয়া থাকে। পরে আবার তাহা ঝুলাইয়া রাখে। প্রচলিত প্রথানুসারে ইন্দু চিত্রখানিকে প্রণাম করেন বা তাহার পূজা করেনা; কেবল কোলে করিয়া বসিয়া থাকে এবং সময়ে সময়ে কালি দিয়া তাহার সংস্কার করিবার চেষ্টা করে।

 বিবাহের সময়ে ফটোগ্রাফখানি ইন্দুর পিতৃগৃহে আসিয়াছিল। সে বিধবা হইবার পরে তাহার মাতা ফটোগ্রাফখানি বাঁধাইয়া তাহাকে দিয়াছিলেন। সেখানি যতদিন স্পষ্ট ছিল ততদিন লজ্জায় তাহার দিকে চাহিত না। যখন সেদিকে চাহিতে আরম্ভ করিল, তখন ছবিখানি মিলাইয়া আসিতেছে, কেবল চক্ষু দুটি ও ভ্রুযুগল স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যাইত। তাহার পর ছবিখানি যেমন মিলাইয়া যাইতে লাগিল, ইন্দু কালি দিয়া তাহার সংস্কার করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। ফলে দাঁড়াইল যে, দশ বৎসর পরে, ফটোগ্রাফের পরিবর্ত্তে, মসীলিপ্ত পীতবর্ণের একখানি মলিন কাগজ দেখা যাইত। তাহার যে কি মাধুর্য্য, তাহা ইন্দুই বুঝিত; মসী দিয়া চিত্রের যে কি সংস্কার হইয়াছিল, তাহাও সেই বুঝিত। চিত্রখানি তাহার প্রিয় বলিয়া কেহ কোন কথা বলিত না। ইন্দু চিরকালই মাতার নিকটে শয়ন করিত, সেদিনও মাতার নিকট শয়ন করিয়াছিল; কিন্তু কোন মতেই ঘুমাইতে পারিতেছিল না, বিছানায় শুইয়া ছট্‌ফট্‌ করিতেছিল। তাহার মনে হইতেছিল তাহার বুকের উপর কে যেন একটা গুরুভার দ্রব্য চাপাইয়া দিতেছে।

 অনেকক্ষণ পরে ইন্দু উঠিয়া বসিল; বসিয়া একটু আরাম বোধ করিল, সঙ্গে সঙ্গে তন্দ্রা আসিয়া তাহাকে অভিভূত করিল। তাহার পর সে দেখিতে পাইল যে চিত্রখানা যেন জ্বলিয়া উঠিয়াছে, সমস্ত ছবিখানা

৫৭