পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

(8)

 ডাক্তার আসিয়া বলিল, ইন্দু হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হইয়াছে। রজনীর বিবরণ শুনিয়া মহিলারা স্থির করিলেন যে, কোন উপদেবতা আসিয়া ইন্দুকে আশ্রয় করিয়াছে। তন্দ্রার ঘোরে সেদিন অনেকেই গান শুনিয়াছিলেন; তাহার পর গ্রামের কৃষকবালকগণ আসিয়া যখন বলিয়া গেল যে দেওয়ানা জিন বনে বনে উপত্যকায় উপত্যকায় অতি মধুর স্বরে গান গাহিয়া বেড়ায়, তখন সকলেরই বিশ্বাস বদ্ধমূল হইয়া গেল।

 বুঝিল না কেবল ইন্দু। রজনীর প্রত্যেক ঘটনা তাহার হৃদয়ে অঙ্কিত হইয়া গিয়াছিল। সে স্পষ্ট বুঝিয়াছিল, সে যাহা দেখিয়াছে তাহা প্রত্যক্ষ,—স্বপ্ন নহে। সে যাহা দেখিয়াছিল, তাহা কাহাকে কাহাকেও বুঝাইবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু তাহারা তাহার কথা হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছে। ইন্দু সেই অবধি গম্ভীর হইয়া গিয়াছে।

 তাহার একমাত্র দুঃখ এই যে, বেড়াইবার সময় কেহ তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যায় না। সে মনে মনে ভাবিয়া থাকে যে বেড়াইতে গেলে হয় ত তাঁহার সাক্ষাৎ পাইবে। যেখানে বনপথে মৃগশিশু স্তম্ভিত হইয়া কোকিল-কুজন শ্রবণ করে, বিশাল নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ক্ষীণকায়া স্রোতস্বিনী একটানা গান গাহিয়া যায়, মানবের পাদস্পর্শ্বে যেখানে শ্যামল শম্প শয্যা শুকাইয়া যায় নাই, সেইখানে হয়ত নুপুর-নিক্কণ শ্রুত হইয়া থাকে, রাঙা চরণ দুখানি হরিৎ তৃণ-ক্ষেত্রের উপর দিয়া নাচিয়া চলিয়া যায়, অথচ দূর্ব্বাদলের একটিও দল ছিঁড়িয়া পড়ে না। সেইখানে যাইবার জন্য ইন্দুর প্রাণ আকুল হইয়া উঠে; কিন্তু হায়, তাহার কথায়

৬১