গুচ্ছ।
প্রথমা পত্নী যখন ইহলোক পরিত্যাগ করেন, তখন বাধ্য হইয়া সংসার রক্ষার জন্য মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে দ্বিতীয়বার দার-পরিগ্রহ করিতে হইয়াছিল, কারণ হরবল্লভের আপনার বলিতে সংসারে অপর কেহ ছিল না! দেখিয়া শুনিয়া নিজে পছন্দ করিয়া এক দরিদ্র ব্রাহ্মণের মাতৃহীনা কন্যাকে হরবল্লভ যখন বিবাহ করিয়া লইয়া আসিলেন, তখন তাহার বয়ঃক্রম ত্রিশ বৎসরের অধিক নহে। গ্রামের লোকে কত কথা বলিল, বৃদ্ধের বলিলেন, হরবল্লভ একটা হা’ঘরের মেয়ে অনিয়াছে, এইবার মুখুয্যেদের অচলা লক্ষ্মী বুঝি চঞ্চলা হইলেন। গ্রাম্য-গেজেটগণ বলিয়া বেড়াইলেন যে নূতন বৌ আসিয়াই ছেলে চারিটার মুখের ভাত কাড়িয়া লইয়া বাড়ী হইতে বিদায় করিয়া দিয়াছে, হরবল্লভ ইহার মধ্যেই ভেড়া হইয়া গিয়াছে! কিন্তু ফলে কাহারও কথা সত্য হইল না, বিমাতার কি এক আশ্চর্য্য গুণে বশীভূত হইয়া মাতৃহীন শিশুচতুষ্টয় বিমাতার প্রতি আকৃষ্ট হইল। মুখুয্যেদের নূতনবধু অঘটন ঘটাইল দেখিয়া গ্রামে যত ঈর্ষান্বিতা পরশ্রীকাতরা রমণী ছিলেন তাঁহারা একেবারে জ্বলিয়া উঠিলেন। পাড়ায় পাড়ায় মজলিস বসিয়া গেল, ঘোরতর তর্কবিতর্কের পর স্থির হইল যে, নূতন বধু নিশ্চয়ই ডাকিনী। যে প্রবল বলে, প্রবল প্রতাপান্বিত হরবল্লভ মুখোপাধ্যায় মেষশাবকে পরিণত হইয়াছেন, তাহার বলে যে মাতৃহীন অনাথ শিশুচতুষ্টর বশীভূত হইবে, তাহাতে আর আশ্চর্য্যের কথা কি আছে? স্থির হইয়া গেল, ছেলে চারিটার রক্ষার আর কোনও উপায় নাই! হরবল্লভের নূতন স্ত্রী নীরবে সাধারণ গৃহস্থ বধূর ন্যায় সংসারে মিশিয়া গেল। তাহার ঐশ্বর্য্য, তাহার সুখসম্পদ দেখিয়া যাহারা জ্বলিয়া উঠিয়াছিল, তাহারা তুষের আগুনের ন্যায় ভিতরে