গুচ্ছ।
কক্ষের দ্বারে গিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিল “দি’মা, ওদি’মা!” মেজ-বৌ তখন অভিমান ভরে বলিয়া উঠিল “মা নসু ডাক্ছে।” এমন সময় দেখিতে দেখিতে শেফালিকা উপরে আসিয়া পড়িল। সে মাতার একমাত্র সন্তান, বহুদিন আদর্শনের পর জননীকে দেখিবার জন্য তাহার প্রাণ আকুল হইয়া পড়িয়াছে। ছোট-বৌ তাহাকে নিজে ধরিয়া রাখিতে পারিল না, বরঞ্চ সে ছোট-বৌকে ধরিয়া লইয়া উপরে আসিল। ছোটবৌ তখন তাড়াতাড়ি তাহার হাত ছাড়াইয়া কুটুম্বিনীর অভ্যর্থনার জন্য নীচে চলিয়া গেল।
শেফালিকা আসিয়া দেখিল যে মাতার শয়নকক্ষের দ্বার রুদ্ধ, দ্বারের পার্শ্বে মেজ-বৌ অবনত মস্তকে দাঁড়াইয়া আছে, আর নসু তাহার ছোট ছোট হাত দুখানি দিয়া দুয়ারে ধাক্কা মারিতেছে ও ডাকিতেছে “দি’মা, ও দিমা।” শেফালিকা থম্কিয়া দাঁড়াইল, তাহার পর আকুলকণ্ঠে ডাকিল “মা।” ভগ্নহৃদয়ের কোন ছিন্নতন্ত্রীতে সস্তানের করুণ আহ্বান আঘাত করিয়া কি এক অভিনব ভাবের সৃষ্টি করে, তাহা কে বর্ণনা করিতে পারিয়াছে! হরবল্লভের পত্নী আর থাকিতে পারিলেন না, এইবার রুদ্ধদ্বার মুক্ত হইল। কন্যাকে দেখিয়া মনের বাধ ভাঙ্গিয়া গেল, মাতাপুত্রী দৃঢ় আলিঙ্গন-বদ্ধ হইয়া নীরবে অশ্রু বিসর্জ্জন করিতে লাগিল, আর মেজ-বৌ কাষ্ঠপুত্তলিকার ন্যায় দ্বারে দাঁড়াইয়া রহিল।
নসু দেখিল তাহারই বিলক্ষণ লোক্সান্। সে ডাক ছাড়িয়া কাঁদিয়া উঠিল, তখন মেজ-বৌ তাহাকে উঠাইয়া লইয়া তাহার মাতামহীর ক্রোড়ে দিল, নসু কাঁদিয়া জিতিল এবং সকলের ক্রন্দন থামাইল। তখন শিউলি মেজ-বৌকে বসাইয় সে যতদূর জানিত তাহ শুনিল, তাহার পরে