পরিবর্ত্তন।
বাবু বলিয়া পাঠাইয়াছেন “শিউলির মা যদি চলিয়া যান ত’ আমি কি তাঁহাকে বঁধিয়া রাখতে পারিব?” লজ্জায় ঘৃণায় মেজ-বৌএর মুখ লাল হইয়া গেল। হরপ্পভের পত্নী স্বামীর শয়নকক্ষে ও ঠাকুরঘরে প্রণাম করিয়া ধীরপদে গাড়ীতে উঠিলেন, শেফালিকা তাহার পুত্র ও ননদ লইয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ উঠিল, মেজ-বৌ ও ছোট-বৌ কাঁদিতে কাঁদিতে গাড়ীতে তুলিয়া দিতে আসিল। তখন সেজ-বৌ এর ঘরে মস্ত তাসের আড্ডা বসিয়াছে, হাসির ফোয়ারা ছুটিয়াছে। যখন চোখ্ মুছিতে মুছিতে মেজবৌ ও ছোট-বৌ অন্দরে প্রবেশ করিল তখন বামা ঠাকুরঝি উঠানে পানের পিক্ ফেলিতে আসিয়াছিল, তিনি তাঁহাদিগকে দেখিয়া একগাল হাসিয়া বলিলেন “বলি তোদের আবার হলো কি, ‘সৎ-শাশুড়ী বিদেয় হলো, ওতো ফোড়া গ’ল্ল্, তার জন্যে আবার চোখে নোনা-পানি কেন?”
শরতের শেষ বড়ই মধুর, বড়ই সুন্দর। এই সময়ে বৈদ্যনাথ মধুপুর অঞ্চলে অনেক বাঙ্গালীর সমাগম হইয়া থাকে। বৈদ্যনাথে ও মধুপুরে একটি আশ্চর্য্য জিনিষ দেখিতে পাওয়া যায়। তাহা বাঙ্গালী রমণীর স্বাধীনতা। কোন কোন শৈলাবাসে বঙ্গদেশীয় মহিলাগণ কিছু কিছু স্বাধীনতা পাইয়া থাকেন বটে, কিন্তু বৈদ্যনাথ বা মধুপুরের নিয়মের সহিত তাহার তুলনাই হইতে পারে না। এই দুই স্থানে আসিয়া বাঙ্গলা দেশের অবরোধ প্রথা যেন উঠিয়া যায়, বরঞ্চ পুরুষদিগকে সস্কুচিত হইয়া পথ চলিতে হয়। দাড়োয়া নদীর তীরে মহিলাদিগের বেড়াইবার অতি রমণীয় স্থান। অপরাহ্ন হইয়া আসিয়াছে এমন সময়ে একটি বর্ষীয়সী বিধবা মহিলা নদীতীরে দাঁড়াইয়া একটি বালককে ডাকিতেছেন। বালক কোনমতেই উঠবে না, সে কেবল জল ঘাঁটিতেছে আর অপরাপর বালক-