পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵ গোড়ায় গলদ ভৃত্য। আসন এসেছে সেগুলো রাখি কোথায় তাই জিজ্ঞাসা করছি। 鹼 শিবচরণ। আমার মাথায়! একটু গুছিয়ে-গাছিয়ে নিজের বুদ্ধিতে কাজ করা, তা তোদের দ্বারা হবে না ; চল আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। ওরে বাতিগুলো যে এখনো জ্বালালে না! এখানে কোনো কাজেরই একটা বিধিব্যবস্থা নেই—সমস্ত বেবন্দোবস্ত! নিবারণ, তুমি ভাই একটু ঠাণ্ডা হয়ে বসো দেখি— বাস্ত হয়ে বেড়ালে কোনো কাজই হয় না। আঃ, বেটাদের কেবল ফাকি বেহারা বেটারা সবাই পালিয়েছে দেখছি— আচ্ছা করে তাদের কানমলা না দিলে— নিবারণ। পালিয়েছে নাকি ! কী করা যায় ! শিবচরণ। ব্যস্ত হোয়ো না ভাই—সব ঠিক হয়ে যাবে। বড়ো বড়ো ক্রিয়াকর্মের সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা ভারি দরকার। কিন্তু এই রেধো বেটার সঙ্গে তো আর পারি নে ! আমি তাকে পই পই করে বললুম, তুমি নিজে দাড়িয়ে থেকে লুচিগুলো ভাজিয়ো, কিন্তু কাল থেকে হতভাগা বেটার চুলের টিকি দেখবার জো নেই। লুচি যেন কিছু কম পড়েছে বোধ হচ্ছে। নিবারণ। বল কী শিবু! তা হলে তো সর্বনাশ! শিবচরণ। ভয় কী দাদা ! তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, সে আমি করে নিচ্ছি। একবার রাধুর দেখা পেলে হয়, তাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিতে হবে। চন্দ্রকান্ত নিমাই প্রভৃতির প্রবেশ নিবারণ। আহার প্রস্তুত, চন্দ্রবাবু, কিছু খাবেন চলুন। চন্দ্রকান্ত । আমাদের পরে হবে, আগে সকলের হোক । শিবচরণ। না না, একে একে সব হয়ে যাক। চলো চন্দর, তোমাদের খাইয়ে আনি। নিবারণ, তুমি কিছু ব্যস্ত হোয়ো না, আমি সব ঠিক করে নিচ্ছি। কিন্তু লুচিটা কিছু কম পড়বে বোধ হচ্ছে । নিবারণ। তা হলে কী হবে শিবু! শিবচরণ। ঐ দেখো! মিছিমিছি ভাব কেন ! সে-সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন কেবল সন্দেশগুলো এসে পৌছলে বাচি । আমার তো বোধ হচ্ছে ময়রা বেটা বায়না নিয়ে ফাকি দিলে। নিবারণ। বল কী ভাই ! শিবচরণ। ব্যস্ত হোয়ো না, আমি সব দেখে শুনে নিচ্ছি। [সকলকে ডাকিয়া লইয়া প্রস্থান চতুর্থ দৃশ্য বাসর ঘর বিনোদবিহারী । কমলমুখী ও অন্য স্ত্রীগণ সম্মুখবর্তী পথ দিয়া আহারার্থী বরযাত্ৰগণ যাতায়াত করিতেছে ইন্দুমতী। এতক্ষণে বুঝি তোমার মুখ ফুটল ! বিনোদবিহারী। আপনার ও-হাতের স্পর্শে বোবার মুখ খুলে যায়, আমি তো কেবল বর। ক্ষান্তমণি। দেখেছিস ভাই, আমরা এতক্ষণ এত চেষ্টা করে একটা কথাও কওয়াতে পারলুম না আর ইন্দুর হাতের কানমলা খেয়ে তবে ওর কথা বেরোল। প্রথমা। ও ইন্দু, তোর কাছে ওর কথার চাবি ছিল না কি ! তুই কী কল ঘুরিয়ে দিলি লো! দ্বিতীয়া । তা দে ভাই, তবে আর-এক পাক দে । ওর পেটে যত কথা আছে বেরিয়ে যাক ।