সংস্কৃত-যুগে এই চুলের সমৃদ্ধি বুঝাইতে কালসর্প, “কলঙ্ক চাঁদার” প্রভৃতি কত উৎপ্রেক্ষার ছড়াছড়ি পড়িত। তারপর,—কথা বলিবার একটা নির্দ্দিষ্ট ভঙ্গী এই সকল কবিতায় পাওয়া যায়, যদ্দ্বারা ইহাদের আদর্শের একত্ব প্রতিপাদিত হয়। কি গোরক্ষ বিজয়, কি ময়নামতীর গান, কি রূপ-কথা,—সর্ব্বত্র, “প্রদীপ নিবিলে তৈল দিয়া কি হইবে? জল চলিয়া গেলে আইল বাঁধিলে কি হইবে?—ইত্যাদি ধরণের আক্ষেপোক্তি আছে—অবশ্য সংস্কৃত উদ্ভট কবিতা খুঁজিলে “নির্ব্বাণ দীপে কিমু তৈল দানং” প্রভৃতি কথা পাওয়া যায়। কিন্তু আমার বিশ্বাস প্রাচীন বাঙ্গলা কবিতা হইতে এইরূপ সংস্কৃত উদ্ভট সৃষ্ট হইয়াছিল। তৃতীয়তঃ কোথায় গোপীচন্দ্রের গান আর কোথায় ময়মনসিংহ গীতিকা?—কিন্তু ইহারা দুই ভিন্ন জগতের কথা হইলে অনেক কথা ছত্রে ছত্রে মিলিয়া যায়—ময়মনসিংহ গীতিকার মলুয়ায় ৮০ পৃঃ (২১-২৬) পংক্তি ও আমাদের এই গোপীচন্দ্রের ৯৭ পৃঃ ৬৭৫-৭৬ পংক্তি মিলাইয়া পড়ুন। গোপীচন্দ্রের গানের সন্ন্যাস খণ্ডে ৫৫ পৃষ্ঠার সঙ্গে মনসার ভাসানে (বঙ্গসাহিত্য পরিচয়) ২৮৮ পৃষ্ঠার বর্ণনারও সেইরূপ বিশেষ ঐক্য দৃষ্ট হয়।[১] তাহা -
- ↑
“বান্দি বান্দি বলি তখন ডাকে বন বন
কি করি বান্দিব বিটি কার পানে চাও
বাপ কালিয়া কাপড়ের ঝাপী আনিয়া ফেলাও।
আনিল প্যাটারা বান্দি ঘুচালে ঢাকনি!
দুই নগুলে বাহির কেল্ল বাঙ্গাল গাইয়া ভনি।
ঐ সাড়ি পরি নটী উপ নেহালায়।
মনত না খাইল সাড়ি বান্দিকে বিলায়।
আর এক না সাড়ি পরে নির্যর মেলানি।"
গোপীচন্দ্র, সন্ন্যাস, খণ্ড, ২.. পৃঃ
“কাপড়ের পেটারি বালি আনে টান দিয়া।
খান কত বঙ্গ তোলে নিচিয়া বাচিয়া।
প্রথমে পরেন সাড়ি ‘নাম যাত্রা সিদ’।
নাটুয়ায় নাট করে গায়েন গায় গীত।
সে কাপড় পরিয়া বালি আগে পাছে চায়।
মনোরমা নহে কাপড় পেটরায় পরায়।”
বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়, ২৮৮ পৃঃ।