পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
গোপীচন্দ্রের গান

 “চ্যাং আর ব্যাং” নামক খোঁপা বাঁধিল। এই খোঁপা চুলের কায়দায় ঠিক ষোলখানি ঠ্যাং অর্থাৎ পা যেন (নায়কের দিকে) বাড়াইয়া দিল, কেহ কি জন্মিয়া এরূপ চুলের ঠ্যাং দেখিয়াছেন? কিন্তু আয়নার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া হীরার এ খোঁপাও পছন্দ হইল না, সে “চ্যাংব্যাং” খোঁপা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়া তৃতীয়বারে―

 “নাটি আর নটি” খোঁপা বাঁধিল, চুলের কায়দায় যেন ছয় বুড়ি পদাতিক সৈন্যের লাঠি খেলার দৃশ্য দেখা যাইতে লাগিল, কিন্তু এই লাঠিয়ালী খোঁপাও আয়নার দিকে চাহিয়া হীরা পছন্দ করিল না, সে তাহা এলাইয়া দিয়া চতুর্থবারে―

 “ভ্রমর গুঞ্জর” নামক এক অপূর্ব্ব খোঁপা বাঁধিল, এই খোঁপার তিনটি দ্বার, এক দ্বারে গায়ক গান করিতেছে, আর এক দ্বারে ব্রাহ্মণ তপস্যা করিতেছে এবং শেষ দ্বারে নর্ত্তক নাচিতেছে, প্রতিদ্বার নানা সুগন্ধি ফুলে সাজানো,―সন্ধ্যাকালে ভ্রমরের কলরবে একটা সুদৃশ্য প্রীতি-মুখরিত পুরার মত ইহা দেখাইতে লাগিল, এবার আয়নায় খোঁপা দেখিয়া হীরা খুসী হইল।

 বস্ত্রবয়ন কুশলতার নানারূপ কথা আছে। “বাঙ্গাল গাইয়া ভনি” নামক একরূপ বস্ত্রের উল্লেখ আছে (২৫৫ পৃঃ), ইহা খুব ভাল হইলেও এই শাড়ী হীরার পছন্দ হয় নাই, সে বান্দীকে ইহা বিলাইয়া দিয়াছিল―দ্বিতীয় শাড়ীর নাম “নিয়ব মেলানি” ইহার বয়ন এরূপ সূক্ষ্ম সূত্রের যে নিকটে মেলা (প্রসারিত) থাকিলেও রাতের বেলা এই শাড়ী দেখা যাইত না, কিন্তু দিনের বেলায় উহার কারুকার্য্য ও দীপ্তি জ্বলিয়া উঠিত। এই শাড়ী যখন হীরানটি পরিধান করিল, তখন “শাড়ি আর নটি গেইল মিলিয়া” অর্থাৎ নটি যে শাড়ী পরিয়াছে এরূপ বোঝা গেল না, উহা এত সূক্ষ্ম যে গায়ে মিলাইয়া গেল,―সুন্দরী বিবসনাবৎ প্রতীয়মান হইল। হায় সেই সূক্ষ্ম বয়নের দেশের কারিগরের সন্ততিরা খদ্দর দিয়া দেহের ভার দ্বিগুণ বাড়াইয়া “বাহবা” লইতেছেন!

 রাজ্য-শাসনে যে প্রজাদের কতকটা হাত ছিল, তাহা এই গানে এবং ময়নসিংহ গীতিকায় পাওয়া যায়। রাজা যখন অত্যাচারী, তখন প্রজারা নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া রহে নাই। মোড়লকে লইয়া পরামর্শ করিয়া তাহারা রাজাকে অভিচার দ্বারা বধ করিবার চেষ্টা পাইয়াছে। যখন রাজা গোবিন্দচন্দ্র