পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



মুখবন্ধ
১৫

অকুশলী রচনার মধ্যে আমরা অদুনার যে আলেখ্য পাইতেছি, তাহা এত দিন পরেও মলিন হয় নাই। সেকালের বাঁকমল ও মেঘ ডুম্বর শাড়ী পরিয়াছেন বলিয়া তিনি কোন অংশে বুট-পরিহিতা, গাউন বিলাসিনীদের কাছে মাথা হেঁট করিবেন না। তাঁহাকে আমরা ভগবতীর মন্দিরে তাঁহারই পাশে স্থান দিয়া পূজার অর্ঘ্য দিব। উনিশ বৎসরে রাজার মৃত্যু হইবে শুনিয়া অদুনা বলিতেছেন, তিনি যমকে পূজা করিয়া স্বামীর আয়ু বাড়াইয়া লইবেন, যমকে যে উপায়ে তিনি বশীভূত করিতে চাহিতেছেন তাহা সাবিত্রীর তপস্যা হইতেও বড় তপস্যা―

“নানা উপহারে আমরা যমকে পূজা দিব।
মস্তকের চুল কাটিয়া চামর ঢুলাইব।
জিহ্বা কাটিয়া আমরা সলতে পাকাইব।
পৃষ্ঠের চর্ম্মকাটি আমরা চাঁদোয়া টাঙ্গাইব।
দশ নখ কাটিয়া মোরা দশ বাতি দিব॥
পায়ের মালই কাটিয়া মোরা প্রদীপ জ্বালাব।
নানান পুষ্পজলে যমের সেবায় মানাব।
সেবায় মানিয়া আমরা স্বামী বর লিব।

ভারতবর্ষে রমণীর প্রেম কখনই উপন্যাসী অ্যামোদ-প্রমোদ নাহে―ইহা চিরকালই তপস্যা, আত্মোৎসর্গ ও সাধনা।

 উপসংহারে আমি অন্যতম সম্পাদকদ্বয়―বিশ্বেশ্বর বাবু ও বসন্ত বাবু সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিব। মুন্সী আবদুল করিমের টীকা টিপন্নী সহিত প্রদত্ত গানটি যে আমাদের বিশেষ উপকারে লাগিয়াছে, তাহা পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে। বিশ্বেশ্বর বাবু গোপীচন্দের গানের যে পাঠটি রংপুর নীলফামারি হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন, তাহা অতি বিস্তৃত ও মূল্যবান। তিনি আজ ষোল সতের বৎসর যাবৎ একান্ত নিঃস্বার্থ ভাবে এই গানের জন্য খাটিয়াছেন―কোন পুরস্কারের আশা করেন নাই। তাঁহার এই মহার্ঘ-বহু-পরিশ্রমের ফল তিনি কোন প্রত্যাশা না রাখিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে দিয়াছেন। যে কল্পতরুমূলে বঙ্গভাষার সাধনা চলিতেছে সেই মহামান্য স্যার আশুতোষের পরিচালিত বিদ্যা-