পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
গোপীচন্দ্রের গান

পীঠে তিনি তাঁহার জীবনের এক তৃতীয় ভাগের যত্ন ও শ্রমের ফল অর্পণ করিয়া সন্তুষ্ট হইয়াছেন। তাঁহার এই মহাদানের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হইতে তাঁহাকে কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি।

 বসন্ত রঞ্জন রায় মহাশয় আমাদের ঘরের লোক; তিনি এই গানের ভাষাতত্ত্ব লইয়া যতটা খাঁটীয়াছেন, তাহা আমাদের প্রাপ্য হইলেও আমরা তাঁহার প্রাণান্ত পরিশ্রমের গৌরব স্বীকার করিতে বাধ্য। আমি বঙ্গসাহিত্য পরিচয়ের একটা শব্দসূচী দিয়াছি, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় কবিকঙ্কণের শব্দসূচী সঙ্কলন করিতেছেন, আমরা উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয় হইতে সাহায্যকারী পণ্ডিত নিযুক্ত করাইয়া পরিশ্রমের ভার লাঘব করিয়া লইয়াছি; কিন্তু বসন্ত বাবু এই গ্রন্থের পরিশিষ্টে ভাষাতত্ত্বের যে গুরুতর আলোচনা করিয়াছেন এবং ইহার যে বিরাট-শব্দসূচী প্রস্তুত করিয়াছেন, তাহা সমস্তই একক করিয়াছেন, তিনি পরিশ্রমী এবং লাজুক প্রকৃতির লোক সুতরাং প্রাণান্ত শ্রম স্বীকার করিয়াও বিশ্ববিদ্যালয় হইতে কোন পণ্ডিতের সাহায্য ভিক্ষা করেন নাই। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. এ. ক্লাস পড়াইবার জন্য তাঁহার দ্বারা ইহার পূর্ব্বেই শব্দার্থের একটা সূচি প্রস্তুত ছিল, তাহা না হইলে অল্প সময়ের মধ্যে এতটা কাজ দেখাইতে পারিতেন না। কিন্তু শত শ্রম করিলেও প্রথম সংস্করণ সর্ব্ব বিষয়ে নিখুঁৎ হইতে পারে না। এই অক্লান্ত শ্রমের নিদর্শন শব্দ সূচীটিও যে একেবারে সম্পূর্ণ হইয়াছে তাহা বলা যায় না, দৃষ্টান্ত স্থলে বলা যাইতে পারে, গোপীচন্দ্রের ১৫৪ পৃষ্ঠায় যে “তিতি” শব্দটি আছে, তাহা বসন্ত বাবুর শব্দসূচী হইতে বাদ পড়িয়াছে। কিন্তু এসকল অতি ক্ষুদ্র অসম্পূর্ণতা ধর্ত্তব্যের মধ্যে নহে।

 শুকুর মামুদ প্রণীত যোগীর পুঁথি নামক এই গানের যে পাঠ মুদ্রিত হইল, তাহা রংপুরের প্রসিদ্ধ জমিদার শ্রীযুক্ত নলিনীমোহন রায় চৌধুরী মহাশয় আমাকে দিয়াছেন। যদিও মাত্র বাঙ্গলা ১৩১৯ সালে এই পুঁথি মুদ্রিত হইয়াছিল, তথাপি এখন ইহা একেবারে দুষ্প্রাপ্য হইয়া গিয়াছে। শুকুর মামুদ রাজসাহী জেলার রামপুর বেয়ালিয়ার ছয় মাইল উত্তর পূর্ব্বে স্থিত সিন্দুর কুসুমী গ্রামের অধিবাসী। এই পুঁথির প্রকাশক শ্রীযুক্ত মুন্সীগোলাম রছুল খোনকার। ঢাকা মিউজিয়াম হইতে শ্রীযুক্ত নলিনীক্ষান্ত ভট্টশালী মহাশয়