পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 যোগিসম্প্রদায়ের লোক প্রায়ই নিরক্ষর। সম্পূর্ণ গাথা আবৃত্তি করিতে পারে এমন “যোগী” এখন দুর্ল্লভ। রংপুর জেলার ভিন্ন স্থানীয় দুইটি বৃদ্ধ যোগীর আবৃত্তি অনুসারে দুইটি সুবিস্তৃত পাঠ এবং অপর এক যোগীর নিকট হইতে একটি আংশিক পাঠ প্রায় ১৬/১৭ বৎসর পূর্ব্বে সংগ্রহ করা হয়, এবং ১৩১৫ সালে সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকায় উহার পরিচয় প্রকাশিত হয়।[১] তাহার পর বাঙ্গালা দেশের কোন কোন স্থান হইতে গোপীচন্দ্রের গানের হস্তলিখিত বা মুদ্রিত পুঁথি আবিষ্কৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে ত্রিপুরা ও চট্টগ্রাম জেলার সংগৃহীত ভবানীদাস-বিরচিত পুঁথি এবং উত্তর বঙ্গে সংগৃহীত মুসলমান কবি সুকুর মামুদের লিখিত পুস্তক বিশেষ উল্লেখ যোগ্য। ভবানীদাসের পুঁথি গোপীচন্দ্রের পাঁচালী নামে এই গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগে মুদ্রিত হইল। চট্টগ্রাম হইতে মুন্সী আব্দুল করিম চারিখানি পুঁথির সাহায্যে এই পাঁচালীর একটি পাঠ স্থির করিয়া পাঠান। উহার সঙ্গে উল্লিখিত পুঁথির একখানিও ছিল; ঐ পুঁথিকে আদর্শ করিয়া এবং মুন্সী সাহেব কৃত পাঠের সহিত মিলাইয়া অন্যতম সম্পাদক শ্রীযুক্ত বসন্তরঞ্জন রায় মহাশয় বিশেষ যত্ন পূর্ব্বক বর্ত্তমান পাঠ প্রস্তুত করিয়াছেন। সম্পাদকগণ এই অবসরে মুন্সী সাহেবকে তাঁহাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাইতেছেন। মূলের নীচে আদর্শের বর্ণবিন্যাস ও পাঠান্তরাদি প্রদত্ত হইয়াছে। আদর্শ পুঁথি তুলট কাগজে উভয় পৃষ্ঠা লেখা: আকার ১৬×৫॥ ইঞ্চ্; আদ্যন্ত খণ্ডিত, পত্র সংখ্যা ২-২৪, প্রতি পৃষ্ঠায় ৯ পঙ্‌ক্তি; লিপিকর ‘শ্রীছৈঅদ ওারিশ মির’ বা ‘মের’ (পৃঃ ৬, ৮।২, ১১।২, ২২।২, ২৪।২): “হোক মালিক মন গাজী সাং পাণ্ডানগর” (পৃঃ ১২।২, ২৪।২)। ক পুঁথির মালিক “শ্রীহালাল গাজী ও তিতা গাজি পরগণে খামার ফুলতলি মৌজে কমলাপুর”; সম্ভবতঃ ১২৪২ বা ১২৪৪ সালের হস্তলিপি। খ পুঁথির লিপিকাল জানা যায় নাই। গ পুঁথি ১০।১২ বৎসরের প্রতিলিপি। শেষ তিন খানি পুঁথির লেখকও মুসলমান। চারি খানি পুঁথিই চট্টগ্রাম অঞ্চল হইতে সংগৃহীত।

 তৃতীয় খণ্ডে গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস নামে যে সুকুর মামুদ প্রণীত পুস্তক প্রকাশিত হইল, উহার এক মুদ্রিত সংস্করণ আমাদিগের হস্তগত হইয়াছে। অন্যতম সম্পাদক রায় বাহাদুর ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের চেষ্টায় এই দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সংগৃহীত হইয়াছে।

কাহিনীর ভারতময় ব্যাপ্তি মাতা ময়নামতীর চেষ্টা ও উদ্যোগে হাড়িপা বা জলন্দরি গুরুর শিষ্যত্বে নবীন নৃপতি গোপীচন্দ্রের যোগী বা সন্ন্যাসী হইয়া গৃহত্যাগই এই সকল গাথার বর্ণনীয় বিষয়। গোপীচন্দ্র বাঙ্গালার রাজা ছিলেন। কিন্তু বাঙ্গালার বাহিরে ভারতের প্রায় সর্ব্বত্রই তাঁহার কাহিনী প্রচলিত। ৺ধর্ম্মানন্দ মহাভারতী মহাশয় তাঁহার “বঙ্গের ব্রাহ্মণ রাজবংশ” নামক পুস্তকে লিখিয়া গিয়াছেন ‘ভারতবর্ষের প্রায় সর্ব্বত্র প্রাচীন কাল
  1. সাহিত্য পরিষৎ-পত্রিকা, পঞ্চদশ ভাগ, দ্বিতীয় সংখ্যা।