পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বুঝান খণ্ড
৩৩
গিত্তানি—গৃহিনী, কর্ত্রী। কোচ ও রাজবংশী ভাষায় গি র থা নী।
সন্দায় বানে বাড়া—সন্ধ্যাকালে ধান ভানে।
বাশের তলে কান্দে ইত্যাদি—(সন্ধ্যাকালে ধান ভানিলে) লক্ষ্মী দেবী খিন্না হন; কিন্তু (পরিশ্রমী গৃহস্থকে ত্যাগ করিয়া) অন্যত্র যাইতে পারেন না। হাবাতি পাড়া—নিরন্নের পল্লী।
প্রবোধ—পরিচয়, অভিজ্ঞান।
চারি চকরি পুকুর খানি ইত্যাদি—৩৬৪ হইতে ৩৮০ পঙ্‌তি তত্ত্বজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্ন। চারি চকরি পুকুর—বৌদ্ধমতে ক্ষিতি, অপ্, তেজ ও মরুৎ এই ধাতু চতুষ্টয় হইতে বিশ্ব চরাচরের রচনা কল্পিত। প্রাচীনগণের মতে পৃথিবী চতুষ্কোণ। প্রপঞ্চসার তত্ত্বে মহাভূতের অন্যতম ক্ষিতিকে চতুরস্র বলা হইয়াছে। পুকুর—প্রা° পো ক্ খ র। মধ্যে ঝলমল—সাংখ্যাচার্য্যেরা বলেন, ‘জগতের অব্যক্তাবস্থা প্রকৃতি এবং তাহারই ব্যক্তাবস্থা জগৎ।’ বোধ হয় ঝলমল শব্দে এই ব্যক্তাবস্থাই লক্ষিত হইয়াছে।
কোন বিরিখের বোটা ইত্যাদি—আমার নিমিত্ত ও উপাদান কারণ কি? বিরিখ—(বৃক্ষ), যথাক্রমে মন ও তনু। বোটা—প্রা° বে ণ্ট,বো ণ্ট, (বৃন্ত)।

পৃষ্ঠা ৭৭

কেবা আন্ধি কেবা বাড়ি ইত্যাদি—কর্ত্তা এবং ভোক্তা কে? স্বপ্ন ও নিদ্রা কাহাকে বলে? জগতে সমস্তই চঞ্চল, স্থির কোন্‌টি? গয়াগঙ্গাদি ক্ষেত্রের অবস্থান
কোথায়? নামজপাদির কারণ কি? পর দেবতা কোন স্থানে থাকেন? যোগের প্রধান সহায় কি কি? ক্ষুৎপিপাসাদি শারীরিক চেষ্টা ও তাহার শান্তি কেমন করিয়া হয়? বিনা বাতাসে নড়ে কোনটা? ইত্যাদি। সপ্তহাজার আনল—যাবতীয় তেজ-পদার্থ। হাজার—ফা° হ জা র। নিনড়—অটল, স্থির। বানারসি—বরণা ও নাসী (বা অসি) এই নদীদ্বয়ের মধ্যবর্ত্তী বলিয়া ক্ষেত্রের নাম বারাণসী। প্রা° ৱা ণা র সী; প্রাচ্য হি° ব না র স। তুলসী—এখানে উপাস্য অর্থে প্রযুক্ত মনে হয়। তুলসীর উৎপত্তি সম্বন্ধে বিবিধ পৌরাণিক উপাখ্যান প্রচলিত দেখা যায়। একটি এইরূপ—গোলকে ইনি রাধার সহচরী ছিলেন; পরে শঙ্খচূড় দৈত্যের পত্নী হন। শঙ্খচূড় শ্রীকৃষ্ণ কর্ত্তৃক নিহত হইলে ইনি সহমৃতা হন এবং কৃষ্ণের বরে ইঁহার কেশ হইতে তুলসী বৃক্ষের জন্ম হয়। তদবধি জগতে তুলসীর পূজ়া ও প্রতিষ্ঠা। বড়সি—বড়সি শব্দে নাড়ীত্রয়ের অন্যতম সুযুম্না লক্ষিত হইয়া থাকিবে। সুতা—বায়ু। প্রা° সু ত্ত (সূত্র)। বড়সির ছিপ—মেরুদণ্ড। স° ব ড়ি শী। ফুলতা—ফাতনা; চোখের পারিভাষিক শব্দ। হানে—হইতে। ফুটিক—টুকু বা বিন্দু। পাতা—চোখের পাতা।
দুই বিরিখের একটি ফল ইত্যাদি—পিতার রেত ও মাতার রজে সন্তানের উৎপত্তি এবং মাতৃগর্ভে স্থিতির কথাই ইঙ্গিত করা হইয়াছে।
পোট—গ্রন্থি; অপরে কহেন উহা পোত শব্দেরই রূপভেদ; অর্থ—ভিত্তিমূল।