পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নারীচরিত্র বর্ণনা করতঃ স্ত্রীর প্রেমের অসারতা প্রদর্শন করিলেন এবং পুত্রের নানাবিধ জটিল আধ্যাত্মিক প্রশ্নের সমাধান করিলেন। রাজা সন্ন্যাস গ্রহণ করিতে সম্মত হইলেন, কিন্তু অন্দরমহলে আসিলেই অদুনা ও পদুনা রাণী অন্যরূপ মন্ত্রণা দিল, ময়নামতীর জ্ঞানের পরীক্ষা লইবার প্রস্তাব করিল। পরদিন রাজদরবারে রাজার প্রশ্নের উত্তরে ময়নামতী স্বীয় অনল প্রবেশের কথা বলা মাত্রই রাজা তাঁহার কথার সত্যতা পরীক্ষা করিতে অগ্রসর হইলেন। সুবৃহৎ লৌহ কটাহ আশী মণ তৈলে পূর্ণ করিয়া “সাত দিন নও রাত” অগ্নির উপর রাখা হইল। খেতুয়া ফেরুসা হইতে ময়নামতীকে আনিতে গেল, তিনি আসিতে অসম্মতি প্রকাশ করিলে তাঁহাকে গামছা দিয়া বান্ধিয়া ফেলিল। ময়নামতী পলায়ন করিবেন না প্রতিজ্ঞা করিলেন এবং বন্ধনমুক্ত হইয়া স্নানে নামিলেন ও গুরুর আশীর্ব্বাদ গ্রহণ করিলেন। তাঁহাকে তপ্ত তৈলে নিক্ষেপ করা হইল। ছয় দিন উত্তপ্ত তৈলের উপর থাকার পর তিনি সর্ষপরূপ ধারণ করতঃ তৈলে ভাসিতে লাগিলেন। রাজার ও খেতুয়ার তখন ভয় হইল যে, মাতা আর ইহজগতে নাই। লোহার কড়াই তেপথিয়া রাস্তায় ফেলিয়া দেওয়া হইল। রাজবধূগণের নিকট মৃত্যুসংবাদ প্রেরিত হইলে তাঁহারা আনন্দে অধীর হইলেন। কিন্তু ময়নামতী মরেন নাই, বধূগণও ক্রমে অবস্থা বুঝিতে পারিয়া বিষণ্ণ হইয়া পড়িলেন। ফলে এ পরীক্ষাও যথেষ্ট বিবেচিত হইল না। তুলাদণ্ড দ্বারা ময়নামতীকে ওজন করা হইল। পোস্তের দানা ও তৎপরে তুলসীপত্রের সহিত ওজনে ময়নামতী পাতলা হইয়া পড়িলেন, তুষের নৌকায় বৈতরণী পার হইলেন। গোপীচাঁদকে এবার সন্ন্যাস গ্রহণ স্বীকার করিতে হইল। তখন শুভদিন দেখিবার জন্য পণ্ডিতের তলব হইল। রাণীরা দাসীর হস্তে ৫০০ টাকা উৎকোচস্বরূপ পণ্ডিতের নিকট পাঠাইয়া দিলেন। পণ্ডিত উৎকোচ গ্রহণ করিতে অনিচ্ছুক, কিন্তু পণ্ডিতানীর যুক্তিতে পরাস্ত হইয়া অবশেষে গ্রহণ করিলেন এবং রাজদরবারে আসিয়া এযাত্রা সন্ন্যাসে কুশল নাই বলিলেন। গোপীচন্দ্র স্বয়ং গণনায় বসিয়া উৎকোচের ব্যাপার ধরিয়া ফেলিলেন। তখন খেতুয়ার প্রতি আজ্ঞা হইল “চণ্ডীর দ্বারে লইয়া ব্রাহ্মণকে বলি দাও”। আদেশ পালিত হইবার উপক্রম হইলে ব্রাহ্মণ কাতর কণ্ঠে ধর্ম্মের দোহাই দিয়া চণ্ডী মাতার করুণা ভিক্ষা করিলেন। চণ্ডীদেবী হৃদয়ে “মুনিমন্ত্র” জপ করিয়া শ্বেত মক্ষিকার রূপ ধরিয়া ব্রাহ্মণের কর্ণে উদ্ধারের উপায় বলিয়া দিলেন। ব্রাহ্মণ “কাতরায়” থাকিয়া রাজার দোহাই দিলেন এবং জানাইলেন যে, তাঁহার নাবালক পুত্র পঞ্জিকাখানিকে অশুদ্ধ করিয়া ফেলিয়াছিল, তিনি স্নান করিয়া ঠিক গণিয়া দিবেন। পণ্ডিত এখন রাজদরবারে সমস্তই কুশল গণনা করিয়া দিলেন, এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করিবার দিন ক্ষণ বলিয়া দিলেন। ব্রাহ্মণ দক্ষিণা পাইয়া গৃহে