পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোপীচন্দ্রের পাঁচালী
৬৩
পাচালী—তান-লয় যোগে গান করিবার উপযোগী রচনা। স° পঞ্চালী অর্থে a system of singing। প্রকৃতেও প ঞ্চা ল ছন্দ ছিল। প্রাচীন ও মধ্য যুগের বাঙ্গালা সাহিত্যে ‘পাঁচলি প্রবন্ধ’, ‘পাঁচালির ছন্দ, পাঁচালির গাথা,’ ‘পাঁচালির কথা’ এবং ‘পাঞ্চালী’, ‘পাঞ্চালিকা’ ও ‘পাঁচালী’র প্রয়োগ অবিরল। শূন্য পুরাণে,—
শ্রীজুত রামাই রচিত পাঁচালী সঙ্গীত॥
(পৃ° 8০)

গোরক্ষবিজয়ে,—

গৌর্খের বিজয় কথা কবিন্দ্র রচিল।
সঙ্গিত পাচলা করি প্রচারিয়া দিল॥

(পৃ° ১৫৩)
 কেহ কেহ মনে করেন, পাঁচজ়নে মিলিয়া যাহা গান করা যায় তাহাই পাঁচালী। বিশ্বকোষ এই মতের সমর্থক। অপরে কহেন গান, সাজ-বাজান, ছড়া-কাটান, গানের লড়াই এবং নাচ এই পঞ্চাঙ্গবিশিষ্ট গীতি-কৌতুক পাঁচালীর বাচ্য। অবশ্য ১৯শ শতাব্দীর পাঁচালীই উহা দ্বারা লক্ষিত।
 এক সময়ে এদেশের সর্ব্বত্র ‘পুতলো নাচ’ প্রচলিত ছিল; এখনও কোথাও কোথাও আছে। পুতলো-নাচে পুত্তলির সাহায্যে প্রধানতঃ পৌরাণিক উপাখ্যান বিশেষের অভিনয় দেখান হয়, এবং বিষয়ের অনুরূপ গীত ও তৎসহ বাদ্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকার গানের পরিণতি পা ঞ্চা লী বা পাঁ চা লী হইতে পারে। চৈতন্য-ভাগবতের ‘পুত্তলি করয়ে কেহ দিয়া বহু ধনে॥’ উক্তি যেন তাহাই সূচিত করে।
তোহ্মার—কুমারপালচরিতে তু ম্ হা র (যুষ্মদীয়), ৮।৭৪। অপভ্রংশ ভাষায় যুষ্মদাদি শব্দের উত্তর ভা র আদেশ হয়; ‘যুষ্মদাদেরীয়স্য ডারঃ’ সিদ্ধহেম° ৮|৪|৪৩৪। প্রাকৃত ম্ হ স্থানে বাঙ্গালা সাহিত্যে হ্ম’ পরিদৃষ্ট হয়। প্রাকৃত পৈঙ্গলে তু হ্মা ণ (বেঙ্গল এসিয়াটিক সোসাইটির সংস্করণ,
পৃ° ৩৪৬)। বস্তুত এরূপ বর্ণবিন্যাস বঙ্গীয় উচ্চারণের অনুকূল নহে।
গতি—(১) গমন, (২) উপায়, (৩) লক্ষ্য। এখানে গমন-কার্য্য বা গমনের ভাব অর্থ নহে। অর্থ—চরম-লক্ষ্য (abstract for concrete, part for whole) অথবা ভর-পারের উপায়। শেষের অর্থ গ্রহণ করিলে চরণ শব্দের লক্ষ্যার্থ ‘চরণে আশ্রয়’ করিতে হয়। কিন্তু ঐ চরণই একান্ত আরাধ্য, লক্ষ্য, সর্ব্বশেষ উদ্দেশ্য Summum bonum এইরূপ অর্থই ভাল; কবির উদ্দেশ্য যাহাই হউক।
দিব্যজ্ঞান—[দিবি ভবং দিব্যং], দিব্ শব্দের অর্থ দীপ্তিমান্ আকাশ; আমরা উহাকেই স্বর্গ অথবা দেবতাদিগের দেশ বলিয়া কল্পনা করিয়া লইয়াছি। তাই দেবতাদিগের নাম দিবিস(ষ)দ, দিবৌকস্ (সঃ), দিবোকস্, দিবিজ, দিবিষ্ঠ, দিবিস্থ ইত্যাদি। দিব্য—স্বর্গীয়, অতি-প্রাকৃত, উজ্জ্বল। জ্ঞান—philosophy which teaches a man how to understand his own nature and how he may be re-united with the Supreme Spirit: Cf জ্ঞান-যোগ। এখানে philosophy নহে, মন্ত্র বিশেষ। অথর্ব্ববেদের মন্ত্র, ভূত-প্রেত-সিদ্ধি এই ধর্ম্মের অঙ্গ; ‘আড়াই অক্ষর জ্ঞান রাখ ধড়ের ভিতর॥’ (পৃ° ৩৪৬)। দিব্যজ্ঞান—অ-মর্ত্ত্য-সম্ভব অতি দুর্ল্লভ জ্ঞান-মন্ত্র, যাহার সহায়তায় ভব-পারে যাওয়া যায়, যমকে ফাঁকি দেওয়া যায়।
সাক্ষাতে—প্রত্যক্ষে, সম্মুখে। আবার সাক্ষাতে পদটিকে পোতা পদের বিশেষণ করিলে সাক্ষাৎ পোতা, ‘মূর্ত্তিমান্, প্রত্যক্ষীভূত’ অর্থ হয়; যেমন ‘সাক্ষাৎ যম’, ‘সাক্ষাৎ ধর্ম্ম’ ইত্যাদি।
পোতা—পারের তরণী। স° পোত; পোতা শব্দের অন্ত্য আকার একটি লুপ্ত