পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০

হাড়িসিদ্ধা জঙ্গল উড়াইয়া দিয়া এক বালুকাময় প্রদেশের সৃষ্টি করিলেন এবং সূর্য্য ও ব্রহ্মাকে বালুকা উত্তপ্ত করিয়া দিতে বলিলেন। বালুকার ভীষণ উত্তাপে গোপীচাঁদ ছট্‌ফট্ করিতে লাগিলেন এবং গুরুর নিকট বৃক্ষচ্ছায়া প্রার্থনা করিলেন। হাড়ি এক বৃক্ষের সৃষ্টি করিলেন, কিন্তু রাজা যেমন হাড়িকে পশ্চাতে রাখিয়া বৃক্ষাভিমুখে ছুটিয়া চলিলেন বৃক্ষও অগ্রসর হইয়া অগ্রে অগ্রে চলিতে লাগিল এবং অবশেষে ভাঙ্গিয়া পড়িয়া গেল। রাজা আবার কান্দিতে লাগিলেন, আবার নূতন বৃক্ষের সৃষ্টি হইল; গুরু শিষ্য তাহার তলায় বসিলেন। রাজা ক্রমে গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইলেন। হাড়ির আদেশে যমের মা পালঙ্ক ও পাখা লইয়া আসিলেন। নিদ্রিত রাজাকে পালঙ্কে শয়ন করান হইল, যমের মা বাতাস করিতে লাগিলেন। হাড়ি বিশ্বকর্ম্মা ও “গাড়া অন্যা” দ্বারা জঙ্গল পরিষ্কার করাইলেন, যমগণ দ্বারা দারাইপুর সহর পর্য্যন্ত রাস্তা প্রস্তুত করাইলেন, “কচ্ছপ মুনি” দ্বারা রাস্তা সমতল করিয়া লইলেন। হাড়িয়ানী রাস্তা লেপিয়া দিল, মালিনী গোলাপ ও চন্দন বর্ষণ করিয়া দিয়া গেল। লঙ্কা হইতে হনুমান ও বানরগণ আহূত হইয়া ফুলের গাছ ও পাথর আনিয়া দিল। গোদা ও আবাল যম হাড়ির আদেশে পাষাণ দিয়া দীঘির ঘাট বান্ধিল এবং ফুলের বাগান প্রস্তুত করিয়া দিল। হনুমানেরা রামের চর, তাহারা হাড়ির সহিত বল পরীক্ষা করিতে গিয়া তাঁহার হাত খানাও নাড়িতে পারিল না এবং “মুখপোড়া” হইয়া থাকিবার অভিশাপ লাভ করিল। রাজা এই বিচিত্র পথ দিয়া চলিবার সময় হাড়ির নিকট প্রকাশ করিয়া ফেলিলেন যে, প্রত্যাবর্ত্তন কালে রাণীদিগের জন্য গোটাকয়েক ফুল তুলিয়া লইতে তিনি ইচ্ছুক। হাড়ি মনে মনে কুপিত হইলেন এবং এই ধৃষ্টতার জন্য রাজাকে শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক হইয়া চলিতে চলিতে গাঁজা সেবনের জন্য রাজার কাছে বার কড়া কড়ি চাহিলেন। রাজা গাঁজার নাম শুনিয়াই তীব্র মন্তব্য প্রকাশ করিলেন এবং সগর্ব্বে বলিলেন “বার কড়া কেন, বার কাহনও দিতে পারি”। হাড়ি মন্ত্রবলে রাজার ঝুলি হইতে কড়িগুলি উড়াইয়া দিলেন এবং কড়ির জন্য রাজাকে পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন। রাজা ঝুলিতে হাত দিয়া অপ্রস্তুত হইলেন এবং কড়ির জন্য নিজে বন্ধক থাকার প্রস্তাব করিয়া ফেলিলেন। হাড়ি বসুমতীকে সাক্ষী রাখিয়া রাজাকে লইয়া বন্দরে চলিলেন। বহু স্ত্রীলোক বন্দরে পসার সাজাইয়া বসিয়াছিল। তাহারা রাজার রূপ দেখিয়া তাঁহাকে একেবারে কিনিয়া ফেলিতে উদ্যত হইল এবং অনেকে রাজাকে ধরিয়া এমন টানাটানি আরম্ভ করিল যে, তাঁহার কোমর রক্ষা করা দায়। তখন হাড়ির আদেশে ইন্দ্রদেব শিলাবৃষ্টি আরম্ভ করিয়া দিলেন, “কালাইবেচীকে” নাছোড়বান্দা দেখিয়া এক প্রকাণ্ড পাথরে তাহার মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়া দিলেন। ইহার পর রাজাকে লইয়া হাড়িসিদ্ধা হীরা নটীর বাড়ী গেলেন এবং দামামায় ভীষণ ঘা মারিয়া আগমন