পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১

বার্ত্তা জানাইলেন। হীরা নটীর নিকট বার কড়া কড়ি লইয়া, রাজাকে তাহার নিকট বান্ধা রাখিয়া সিদ্ধা হাড়ি পাতালে প্রবেশ করিলেন, এবং “চৌদ্দ তাল” জলের তলে যোগাসনে বসিলেন। হীরা রাজাকে বিশেষ যত্ন করিয়া স্নানাহার করাইল। রাজার জন্য বিচিত্র শয্যা রচিত হইল। হীরা বিচিত্র বেশভূষা করিয়া রাজার প্রেমের জন্য লালায়িত হইয়া নিকটে আসিল। কিন্তু তাহার বিপুল আয়োজন ব্যর্থ হইল। রাজা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিলেন, তাহার রূপে ভুলিলেন না। হীরার প্রেম ঘৃণায় পরিণত হইল, রাজার উপর অশেষ নির্যাতনের ব্যবস্থা হইল, ছিন্ন বস্ত্র তাঁহার পরিধেয় হইল, ছাগলের কক্ষ তাঁহার বাসস্থান নির্দ্দিষ্ট হইল, তাঁহাকে জঘন্য খাদ্য দেওয়া হইল। তিনি প্রত্যহ করতোয়া নদী হইতে ১২ ভার অর্থাৎ ২৪ কলসী জল আনিতে আদিষ্ট হইলেন। জলের পরিমাণ কম হইলে প্রহারের ব্যবস্থা হইল। রাজার বক্ষের উপর হীরা নটীর কাষ্ঠপাদুকা সমেত গাত্রধাবন কার্য্য চলিতে লাগিল। “পাপের বিছানা” তোলা ও পাপের কড়ি গণা রাজার নিত্য কর্ম্ম হইল। হীরার অত্যাচারে রাজা মৃতকল্প হইলেন। তখন অদুনা ও পদুনা রাণীর নিষেধ বাক্য মনে পড়িল। তাঁহাদের নাম স্মরণ পথে আসায় রাজপুরীস্থ সত্যের পাশা “আউলাইয়া পড়িল”, রাণীদ্বয় ব্যাকুল হইলেন। রাণীদিগের রোদনে গৃহপালিত সারিশুক পাখী বিকল হইল এবং রাজার অন্বেষণে যাইবার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করিল। বন্ধনমুক্ত হইয়া তাহারা নানাদেশে রাজাকে খুঁজিয়া বেড়াইতে লাগিল। কত অদ্ভুত দেশই তাহাদের নয়নে পড়িল—এক ঠেঙ্গিয়ার দেশ, কাণ ফাড়ার দেশ, মশা রাজার দেশ, মেচপাড়ার দেশ, ত্রিপাটনের দেশ ইত্যাদি। এই সকল দেশে এবং গয়া, গঙ্গা, কাশী, বৃন্দাবন, কোথাও রাজাকে না পাইয়া পক্ষিদ্বয় নদীতে পড়িয়া আত্মহত্যা করিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তাহাদের সে চেষ্টাও ব্যর্থ হইল; কারণ গঙ্গাদেবী রাঘববোয়াল দিগকে সাবধান করিয়া দিয়াছিলেন যে, ইহারা ময়নামতীর নাতি, ইহাদিগকে উদরস্থ করিলে আর নিস্তার নাই। শেষে সারিশুক গোপীচন্দ্রকে অন্য ঘাটে জল তুলিবার সময় দেখিতে পাইল এবং ক্রমশঃ পরিচিত হইল। রাজা স্বীয় রক্ত দ্বারা দুইখানি পত্র লিখিয়া পক্ষিদ্বয়ের হস্তে দিলেন। একখানি অদুনা রাণীর নিকট, সেখানি ব্যঙ্গোক্তি পূর্ণ; অপর খানি ময়নামতীর নিকট, তাহা করুণ বিলাপোক্তি পূর্ণ। পক্ষিদ্বয় যথাস্থানে পত্র প্রদান করিল। ময়নামতী ক্রুদ্ধ হইয়া ধ্যানে বসিলেন ও হাড়িকে মন্ত্রবলে বজ্রচাপড় মারিলেন। হাড়িসিদ্ধা চমকিয়া উঠিলেন ও অনুতপ্ত হৃদয়ে রাজাকে উদ্ধার করিতে চলিলেন। গোপীচন্দ্রকে নদীর ঘাটে পাইয়া হাড়ি তাহাকে রূপান্তরিত করিয়া ঝোলার মধ্যে রাখিলেন এবং হীরা নটীর বাড়ী গিয়া শিষ্যকে ফেরত চাহিলেন। হীরা রাজাকে না পাইয়া অনেক রকম মিথ্যা কথা বলিতে লাগিল। হাড়ি সবশেষে রাজাকে ঝোলা হইতে বাহির করিলেন ও হীরাকে তাহার কড়ি