পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভৌগোলিক সংস্থান

কলিঙ্কাবন্দর (পৃ° ৬৬, ৯৮, ২২৬)—রাজমহেন্দ্রীর সন্নিহিত।
করতোয়া (পৃ° ২৬১)—কথিত আছে, গৌরীর বিবাহ কালে হরের হস্ত-ক্ষরিত জল হইতে এই নদী উৎপন্ন। ইহার জল অতি পবিত্র, বর্ষাকালেও অশুচি হয় না। পূর্ব্বে করতোয়া বঙ্গ ও কামরূপের মধ্যে প্রবাহিত থাকিয়া উভয় দেশের সীমা নির্দ্দেশ করিত। অধুনা এই নদীর গতি সম্পূর্ণ পরিবর্ত্তিত দেখা যায়। এখন ইহা জলপাইগুড়ির পশ্চিমে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া রংপুর অতিক্রম করিয়া বগুড়া জেলার দক্ষিণে হলহলিয়া নদীর সহিত মিলিয়াছে। এইখান হইতে ফুলঝর নামে পরিচিত হইয়া আত্রাই (আত্রেয়ী) নদীতে গিয়া পড়িয়াছে। অনেকের মতে এই ফুলঝরই প্রাচীন করতোয়া। অপরে বলেন, মহানদী ও তিস্তা (ত্রিস্রোতা) মধ্যবর্তী ‘করতো’ নদীই করতোয়া।
মেচ পাড়ার দেশ পৃ° ২৬৭)—কুচবিহার অঞ্চলে হইতে পারে।
নএয়ান গর (পৃ° ৩২৫)—ত্রিপুরা জেলার নুর্ণশর পরগনার নয়ানপুর (A. B. R.)। ‘গর’ (গড়) পুরে পরিণত হইয়া থাকিবে।
গৌড়র সহর—(পৃ° ৩২৫)—প্রাচীন শ্রীহট্টের অপর নাম গৌড়; উহা উত্তর বঙ্গের রাজধানী নহে। তৎকালে শ্রীহট্ট প্রদেশ তিনটি স্বতন্ত্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল— (১) গৌড় বা শ্রীহট্ট, (২) লাউড়, (৩) জয়ন্তী।[১] নারায়ণদেবের পদ্মাপুরাণে শ্রীহট্ট-গৌড়ের উল্লেখ আছে।
কমলাক নগর (পৃ°৩২৫)—প্রাচীন কমলাঙ্ক বর্ত্তমান কুমিল্লা।[২] কমলাঙ্ক পেগু নহে। কুমিল্লার পশ্চিমে পাটিকারা নামক স্থানে কমলাঙ্ক রাজ্যের রাজধানী ছিল।[৩] গোবিন্দচন্দ্র গীতে উহা পাটিকানগর, কিন্তু স্বর্গীয় শরচ্চন্দ্র দাস মহাশয়ের প্রবন্ধে চাটিগ্রাম।
তরপের দেশ (পৃ° ৩৪৩)—তরপ পরগনা শ্রীহট্টে।
সঙ্কছরা মাটী (পৃ° ৩৪৬)—শঙ্খ ছাইল, ত্রিপুরা জেলার লৌহগড় পরগনায়।
কদলীর দেস (পৃ° ৩৬৯)—কামরূপ ও তৎসন্নিহিত ভূভাগ। মহাভারত বনপর্ব্বে ও যোগিনীতন্ত্রের উত্তর-খণ্ডে কদলী বনের উল্লেখ আছে।
ডাড়ার সহর (পৃ° ৩৬৯)—রাঢ় দেশের কোন শহর। রাঢ় বর্ত্তমান বাঙ্গালা দেশের পশ্চিমাংশ। খ্রীষ্টপূর্ব্ব ২য় শতকে মাগধী ভাষায় রচিত জৈন অঙ্গ মধ্যে ‘রাঢ়’ দেশের উল্লেখ আছে। খ্রীষ্টীয় ৫ম শতাব্দে রচিত সিংহলের পালি মহাবংশে উহা ‘লার’ এবং তিরুমলয়ের শিলালিপিতে ‘লাড়’ নামে অভিহিত হইয়াছে। ১২শ শতকের প্রবোধচন্দ্রোদয় নাটকে উহাই ‘রাঢ়া’। সাঁওতালী ভাষায় ‘রাঢ়ো’ অর্থে প্রস্তরময় ভূমি। রাঢ়ো হইতে রাঢ়া বা রাঢ় হওয়া অসম্ভব নয়। কেহ কেহ স° রাষ্ট্র হইতে রাঢ় শব্দের উৎপত্তি কল্পনা করেন।
  1. রাজমালা পৃ° ২৮৭; গৌড়ের ইতিহাস, ২য় খণ্ড, পৃ° ৫৬ পাদটীকা।
  2. Cunningham’s Ancient Goography of India, p 503; রাজকৃষ্ণ বাবুর বাঙ্গালার ইতিহাস, পৃ. ১. পাদটীকা।
  3. রাজমালা, পৃ° ৪।