পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬

প্রদান করিয়াছেন এবং তদনুসারে গ্রন্থের রচনাকাল খৃঃ ষষ্ঠ শতাব্দী বা তৎপূর্ব্ববর্ত্তী বলিয়া অনুমিত হইয়াছে।[১] কিন্তু আচার্য্য ডাঃ প্রফুল্লচন্দ্র রায় নানারূপ যুক্তি দ্বারা প্রতিপন্ন করিয়াছেন যে, এই গ্রন্থ কখন অষ্টাঙ্গহৃদয় প্রণেতা বাগ্‌ভটের লেখনী-প্রসূত হইতে পারে না, ইহা খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ বা চতুর্দ্দশ শতাব্দীর গ্রন্থ।[২]

হাড়িপা প্রচলিত মত অনুসারে হাড়িপা এই গোরক্ষনাথের শিষ্য ছিলেন। হাড়িপা সম্বন্ধেও নানা অদ্ভুত কাহিনী নানা দেশে প্রচার লাভ করিয়াছিল। ৺বাবু শরচ্চন্দ্র দাস বাহাদুর তিব্বতীয় গ্রন্থ হইতে তাঁহার যে বিবরণ ১৮৯৮ খৃঃ অব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে প্রকাশ করেন, তাহার মর্ম্ম এইরূপ—

 বৌদ্ধ সিদ্ধা বালপাদ সিন্ধুদেশে নগরথটে কোন ধনবান্ শূদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বৌদ্ধধর্ম্ম গ্রহণ করেন এবং উদয়ন প্রদেশে (বর্ত্তমান স্বাত ও চিত্রন) গমন করতঃ যোগাভ্যাস করেন। সেখান হইতে জলন্দরে গিয়া বাস করেন, ইহাতে তাঁহার জলন্দরী আখ্যা হয়। তাহার পর নেপাল ও সেখান হইতে অবন্তী প্রদেশে গমন করেন। অবন্তীতে তাঁহার অনেক শিষ্য হয়, কৃষ্ণাচার্য্য তাহাদের অন্যতম। অবন্তী হইতে বালপাদ বাঙ্গালা দেশে আগমন করেন। বিমলচন্দ্রের পুত্র গোপীচন্দ্র তখন বাঙ্গালার রাজা, চাটিগ্রাম তাঁহার রাজধানী। গোপীচন্দ্র সৌখীন পুরুষ ছিলেন এবং অনেক সময়ে দর্পণে নিজ মুখ নিরীক্ষণ করিতেন।[৩] উদ্যানে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য সিদ্ধা নারিকেল-জল পান করিতে ইচ্ছুক হওয়ায়, নারিকেল আপনি তাঁহার মুখের নিকট আসিল ও জলদান করিয়া স্বস্থানে প্রত্যাবর্ত্তন করিল। রাজমাতা ইহা দেখিতে পাইয়া হাড়িবেশী সিদ্ধপুরুষকে আহ্বান করিতে রাজাকে অনুজ্ঞা করিলেন। রাজা তাঁহাকে ডাকিলেন, তিনিও রাজার কর্ণে মন্ত্র দিলেন। সিদ্ধা শূন্যবাদের প্রশংসা করিতে লাগিলেন এবং রাজা তাঁহাকে প্রতারক মনে করিয়া জীবিতাবস্থায় ভূপ্রোথিত করিয়া ফেলিলেন। হস্তী ও অশ্বের বিষ্ঠা সেই স্থানের উপরিভাগে নিক্ষিপ্ত হইল এবং তাহার উপরে কণ্টকপূর্ণ উদ্ভিদ জন্মিতে লাগিল। ইহার পর বার বৎসর পরে কৃষ্ণাচার্য্য কর্ত্তৃক তাঁহার উদ্ধার বর্ণিত হইয়াছে। ইহাতে হাড়ি
  1. Study of the Medical Science in Anciont India by Gananath Sen Vidyanidhi, BA., J. M.S.
  2. History of Hindu Chemistry, Vol. 1, 2nd Edition, p. LXXXIX.
  3. উড়িষ্যা হইতে সংগৃহীত গানেও এই দর্পণে মুখ দেখার উল্লেখ আছে, যথা—

    এতে বোলি মেঘা দর্পণকু ঘেণিকর।
    আপন দেখই বাজা মুখ যে কমল॥ ইত্যাদি

    —বঙ্গ-সাহিত্য পরিচর, ১ম খণ্ড।