এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭
সিদ্ধার অন্য যে কথাই থাকুক, তাঁহার সময় নিরূপণের উপযোগী কোন উপকরণই পাওয়া যাইতেছে না।
দেখা যাইতেছে গোরক্ষনাথ ও হাড়িপার সময় নিরূপণ করতঃ তাহা হইতে গোপীচন্দ্রের সময় নিরূপণের চেষ্টা আমাদের বর্ত্তমান উপকরণের সাহায্যে সফল হইবার আশা নাই। অগত্যা আমাদিগকে অন্য স্থান হইতে সেই উপকরণ সংগ্রহের চেষ্টা করিতে হইবে।
রাজেন্দ্র চৌলের শিলালিপি দাক্ষিণাত্যের রাজেন্দ্র চোল দেবের তিরুমলয়ে উৎকীর্ণ শিলালিপির মর্ম্ম অনেকেই জানেন।[১] এই লিপির মতে তিনি দণ্ডভুক্তিতে ধর্ম্মপাল, দক্ষিণ রাঢ়ে রণশূর, বাঙ্গলার রাজা গোবিন্দচন্দ্র ও উত্তর রাঢ়ে মহীপালকে পরাস্ত করেন। আমাদের গোপীচন্দ্রকে অনেক স্থলে গোবিন্দচন্দ্র বলা হইয়াছে, দুর্লভ মল্লিকের গ্রন্থে ও উড়িষ্যার গাথায় তিনি একেবারে গোবিন্দচন্দ্র। ১৩১৫ সালে আমি লিখিয়াছিলাম “তিরমলয়ের উৎকীর্ণ শিলালিপিতে যে গোবিন্দচন্দ্রের উল্লেখ দৃষ্ট হয় সে গোবিন্দচন্দ্র ময়নামতীর পুত্র বলিয়া ধরিয়া লওয়া কতকটা দুঃসাহসেব কাজ”।[২] গোপীচন্দ্র রংপুরের প্রাদেশিক রাজা বলিয়াই তপন ধরিয়া লওয়া হইয়াছিল। ভবানীদাস কবির ও শুকুর মামুদের গ্রন্থ তখনও আবিষ্কৃত হয় নাই এবং ত্রিপুরার ময়নামতী পাহাড়ে যে গোপীচন্দ্রের কীর্ত্তির ভগ্নাবশেষ বিদ্যমান তাহাও তখন সাধারণের অপরিজ্ঞাত ছিল। এখন ইহা বলা যাইতে পারে যে, গোপীচন্দ্র নিতান্ত ক্ষুদ্র রাজা ছিলেন না, বা রংপুরের অংশবিশেষে মাত্র তাঁহার শাসনদণ্ডের প্রভাব আবদ্ধ ছিল না। তিনি বঙ্গের রাজা ছিলেন, একথা অনেক স্থলেই উক্ত হইয়াছে। তাহার রাজধানী খাঁটি বঙ্গের মধ্যে থাকুক আর নাই থাকুক আমাদের বর্ত্তমান জ্ঞানে তাঁহাকে বঙ্গেশ্বর বলিয়া অনায়াসে গ্রহণ করা যাইতে পারে। শিলালিপিব গোবিন্দচন্দ্রের সহিত অভিন্নতা ও বিরুদ্ধ প্রমাণ উপস্থিত না হওয়া পর্য্যন্ত, স্বীকার করিয়া লইলে বোধ হয় ইতিহাসের মর্য্যাদা লঙ্ঘিত হইবে না। রাজেন্দ্র চোলের রাজত্ব কাল খৃঃ একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। প্রায় এই সময়ে পূর্ব্ববঙ্গে চন্দ্রউপাধিধারী এক বংশের রাজত্ব দেখিতে পাওয়া বঙ্গে চন্দ্রবংশ যায়। এই বংশীয় শ্রীচন্দ্রদেবের তিন খানি তাম্রকলক আবিষ্কৃত হইয়াছে।[৩] উহাতে সন তারিখ না থাকিলেও অক্ষরদৃষ্টে বিশেষজ্ঞেরা উহা দশম কি একাদশ শতাব্দীর লিপি বলিয়া মনে করেন। ইহাব দুইখানি ফরিদপুর