পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০

ইহা ব্যতীত ইহাতে হরিশ্চন্দ্রের যে বংশপরিচয় আছে তাহাতে তাঁহাকে গন্ধবণিক বলিয়া ধরিয়া লওয়া যায় না।

গীতোক্ত অন্যান্য ব্যক্তি অদুনা ও পদুনা ব্যতীত ভবানীদাস ও সুকুরমামুদ যে অন্য রাণীদের নামোল্লেখ করিয়াছেন, অন্য কোন গাথায় তাহার কোন সমর্থক প্রমাণ নাই। এই নামগুলি কতদূর ঐতিহাসিক তাহা সন্দেহের বিষয়। ভবানীদাসের গাথোয় গোপীচন্দ্রের বিবাহ সম্বন্ধে কয়েকটী ছত্র বিশেষ প্রণিধান-যোগ্য—

আর বিভা করাইলা খাণ্ডাএ জিনিয়া।
আর বিভা করাইলা উরয়া রাজার মাঁইয়া॥
দস দিন লড়াই কৈল উড়য়া বাজার সনে।
চৌদ্দ বুড়ি মনুষ্য কাটিলাম এক দিনে॥
চৌদ্দপন মনুষ্য কাটি সাতশত লস্কর।
হস্তী ঘোড়া কাটিলাম তেসট্টি হাজার॥
যুদ্ধেত হারিয়া নৃপ গেল পলাইয়া।
তার বেটী বিভা কৈলাম মহিম জিনিয়া।

—(৩১-৩২ পৃঃ) 

এই “উরয়া” বা উড়িয়া রাজা রাজেন্দ্রচোল বলিয়া অনুমিত হইয়াছেন। একথা ঠিক যে, তিরুমলয়ে উৎকীর্ণ শিলালিপিতে রাজেন্দ্রচোলের বঙ্গাভিযানের সম্পূর্ণ বিবরণ নাই। তিনি প্রথমে বিজয় লাভ করিয়া থাকিলেও শেষে মহারাজ মহীপাল কর্ত্তৃক প্রতিহত হন, গঙ্গার অপর পারে যাইতে সমর্থ হন নাই। আর্য্য ক্ষেমীশ্বর রচিত চণ্ডকৌশিক নাটকে এই কর্ণাটক-নিপাতের উল্লেখ আছে। এই বহিঃশত্রু নিবাকরণে গোপীচন্দ্রের সহায়তা ও তৎকর্ততৃক যুদ্ধ-বিজয়ের পর চোলরাজের সঙ্গিত বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন অবশ্য অসম্ভব ব্যাপার নহে। কিন্তু সমস্ত অনুমানটা এতই সূক্ষ্ম সূত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত যে, ঐতিহাসিকের পক্ষে ইহার মধ্যে জোর করিয়া বলিবার কোন কথাই নাই। “খাণ্ডাই” উড়িষ্যাদেশীয় খাণ্ডাইত হইতে পারে।

 রংপুরের গানের এই কয়েকটী নামও উল্লেখ যোগ্য—

 খেতুয়া—ময়নামতীর পালিত পুত্র এবং গোপীচন্দ্রের প্রধান কিঙ্কর ও সহচর। অন্য দুই গানেও উল্লেখ থাকায় ইহাকে ঐতিহাসিক ব্যক্তি বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে।