পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১

 ভাট দুগ্‌গাবর—অন্য কোন গানে উল্লেখ নাই, ভবানীদাস ভাট দামোদর লিখিয়াছেন।

 হরি পুরন্দর—ইহাদের নামও অন্য কোথাও নাই।

 হেমাই পাত্র—সুকুর মামুদ মনোহর পাত্রের উল্লেখ করিয়াছেন।

 চান সদাগর ও বালা লখিন্দর—ভলানীদাসের গ্রন্থেও সাউধ লক্ষ্মীধরের নামোল্লেখ আছে। এক জাতীয় ও বিখ্যাত লোক বলিয়া এক সঙ্গে নামোল্লেখ আশ্চর্য্য নহে। গোপীচাঁদ ও চান্দসদাগর বা তাঁহার পুত্র লখিন্দর সমসাময়িক লোক মনে করিবার যথেষ্ট উপকরণ নাই।

 বামন সন্তিঘর—ভবানীদাসের গ্রন্থে ব্রাহ্মণ সন্ধিহর; লোকটী ঐতিহাসিক হইতে পারে। ভবানীদাস ইহার যে ব্রহ্মতেজের পরিচয় দিয়াছেন তাহা সকল সময়ে সকল দেশেই সম্মান-যোগ্য। “ব্রাহ্মণের ধড়ে কভু মিথ্যা বাক্য নাহি”, রাজার বিরুদ্ধে এমন তেজোগর্ভ বাক্যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করিতে কয়জন সাহসী হয়?

 রাজা জল্পেশ্বর—অবশ্য জলপাইগুড়ী জেলার জল্পেশ্বর শিব মন্দিরের সংসৃষ্ট—ইঁহাকে গোপীচাঁদের সমসাময়িক মনে করিবার বিশেষ কারণ নাই।

 বিরসিং ভাণ্ডারী—অন্য কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। রংপুরের গাথা ও ভবানীদাসের গ্রন্থে হীরানটীর নামোল্লেখ আছে, সুকুর মামুদের মতে ইহার নাম সুলোচনী বেশ্যা।

রংপুর ও ত্রিপুরাজের গোপীচন্দ্রে বাসস্থানের প্রবাদ পূর্ব্বে রংপুর অঞ্চলের গাথা আলোচনা করিয়া আমি গোপীচন্দ্রকে বাজবংশী জাতীয় বলিয়া অনুমান করিয়াছিলাম এবং তাঁহার রাজধানী রংপুর জেলার পাট্‌কাপাড়ায় ছিল, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিলাম। পরে যে গ্রন্থগুলি আবিষ্কৃত হইয়াছে তদনুসারে তিনি ত্রিপুরা জেলার মেহেরকুল পরগণার রাজা। ভবানীদাস অনেক স্থলেই তাঁহাকে মেহারকুলের রাজা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন যথা—

“আমি বাড়ি বান্ধিয়াছি মেহারকুল সহর”

উত্তরবঙ্গের মুসলমান কবি সুকুর মামুদও মাণিকচন্দ্র ও গোপীচন্দ্রকে “মৃকুল” বা মেহেরকুলের রাজা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। এ অবস্থায় প্রবাদটী উড়াইয়া দেওয়ার নহে। রংপুরে সংগৃহীত গাথায় রাজার বাসস্থানের উল্লেখ নাই, তবে সেখানে “ময়নামতীর কোট,” “পাট্‌কাপাড়া,” “হরিশ্চন্দ্র পাট” প্রভৃতি স্থান এখনও প্রদর্শিত হইয়া থাকে। দুর্ল্লভ মল্লিক কৃত গোবিন্দচন্দ্রের গানে তাঁহাব রাজধানী “পাটিকানগর” বলিয়া লিখিত হইয়াছে। কিন্তু এই পটিকানগর কোথায় তাহার বিবরণ নাই। রংপুর নীলফামারী মহকুমার অন্তর্গত হরিণচরা ও আটিয়াবাড়ী গ্রামে ময়নামতীর কোট।