পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩

মূর্ত্তির তলদেশে প্রাচীন বঙ্গাক্ষরে উৎকীর্ণ একটী পংক্তি আছে—তাহা “যুবরাজ শ্রীজয়চন্দ্রস্য” বলিয়া পঠিত হইয়াছে।[১] কুমিল্লা হইতে শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ দত্ত মহাশয় এই গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেন মহাশয়ের নিকট এক পত্রে লিখিয়াছেন, যে স্থানে এই মূর্ত্তি পাওয়া গিয়াছে তাহা “মাণিকচন্দ্রের বিনষ্ট বাসভবনের ২০০ কি ৩০০ গজ দূরবর্ত্তী”। ময়নামতী পাহাড়ের তিন মাইল দূরবর্ত্তী ভারেল্লা গ্রামে একটি নটেশ মূর্ত্তি পাওয়া গিয়াছে, তাহার পাদদেশে লয়হচন্দ্র নামক অপর একটী চন্দ্র-উপাধিধারী ব্যক্তির নাম উৎকীর্ণ। বৈকুণ্ঠ বাবু ডাঃ দীনেশচন্দ্র সেনের নিকট প্রস্তর-নির্ম্মিত ক্ষুদ্র একটী হর-গৌরী মূর্ত্তি পাঠাইয়া দিয়াছেন। ময়নামতী পহাড়ে যে বহু দেবালয়ের ধ্বংসস্তূপ বর্ত্তমান রহিয়াছে তাহার একটী স্তূপে ইহা পাওয়া গিয়াছে। এই মূর্ত্তিতে শিবের চারিটি হাত, তিনি গৌরীর চিবুকে হাত দিয়া আছেন, উভয়েই বাহনোপরি। লালমাই পর্ব্বতের নিম্নদেশে যুগী জাতীয় বহুলোকের বাস[২]। শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ দত্ত মহাশয় এই জেলার দিশানন্দ বাজপুর গ্রামের বৈরাগীবাড়ী হইতে নাথ সিদ্ধাগণের বৃত্তান্তমূলক ব্যাস নামক কোন কবিব ভণিতাযুক্ত ব্রহ্মযোগ নামক হস্তলিখিত এক খানি ক্ষুদ্র গ্রন্থ পাইয়াছেন; ইহাতে মৎসেন্দ্রনাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা, কানুপা, বিন্দুনাথ ও চৌরঙ্গীনাথ প্রভৃতির উল্লেখ আছে। এই সকল বৃত্তান্ত হইতে বুঝাযায় যে, এ অঞ্চলে একসময়ে যুগী জাতির বিলক্ষণ প্রভাব ছিল এবং গোপীচন্দ্র ও ময়নানতীর স্মৃতি-জড়িত লালমাই পাহাড়ই সেই প্রভাবের কেন্দ্রস্থল। এই পর্ব্বতে উনশত রাজার বাসস্থান বলিয়া প্রবাদ বহুদিন হইতে চলিয়া আসিতেছে।

 মেহেরকুল ও পাটিকারা ২টী পরস্পর সংলগ্ন পরগণা এখনও ত্রিপুরা জেলায় বর্ত্তমান। লালমাই পর্ব্বত এই দুই পরগণার প্রায় সন্ধিস্থলে অবস্থিত, কুমিল্লা হইতে ৪।৫ মাইল পশ্চিমে। মেহেরকুলে গোপীচন্দ্রের বাসস্থান সম্বন্ধে বিবরণ ঐ অঞ্চলে সংগৃহীত অন্য প্রাচীন গ্রন্থেও পাওয়া গিয়াছে। বর্ত্তমান কুমিল্লা সহর মেহেরকুল পরগণার অন্তর্গত।

  1. ইতিহাস ও আলোচনা—চৈত্র, বৈশাখ ১৩২৮।২৯।
  2. ১৩১৯ সনের ফাল্‌গুন মাসের প্রতিভায় প্রকাশিত শ্রীযুক্ত বৈকুণ্ঠনাথ দত্ত মহাশয়ের প্রবন্ধে ময়নামতী পাহাড়ের সংলগ্ন ঘোষনগর গ্রামে ৩০০ঘর যুগীর বাস লিখিত হইয়াছে। মদীয় বন্ধু ত্রিপুরা জেলায় ভূতপূর্ব্ব এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিষ্ট্রেট্ যুক্ত ব্রজদুর্ল্লভ হাজরা আমাকে জানাইয়াছেন যে, ঐ গ্রামে ৯ ঘর যুগীর বাস। দত্ত মহাশয হয়ত নিকটবর্ত্তী গ্রামের যুগীগণকেও ঘোষনগরের অন্তর্গত ধরিয়া লইয়াছেন। শ্রীযুক্ত হাজরা মহাশয় আরও বলেন, ভগ্ন প্রাসাদ গোপীচন্দ্রের নামেই পরিচিত, মাণিকচন্দ্রের নামের কোন প্রবাদ লক্ষিত হয় না। অদুনামুড়া ও পদুনামুড়া উভয়ই বর্ত্তমান।