পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭

পক্ষে যে দাবী আমি পূর্ব্বে উপস্থিত করিয়াছিলাম, নবাবিষ্কৃত প্রমাণে তাহা অত্যন্ত দুর্ব্বল হইয়া পড়িয়াছে।

শ্রীচন্দ্রদেবের তাম্রশাসনে রোহিতাগিরি পূর্ব্বে যে শ্রীচন্দ্রদেবের উল্লেখ করা হইয়াছে, তাঁহার তাম্রশাসন হইতে জানা যায় যে, চন্দ্রদিগের “রোহিতাগি[রি]ভুজাং” বংশে পূর্ণচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন, তাঁহার নাম দেববিগ্রহের পাদমূলে, জয়স্তম্ভ প্রভৃতি স্থানে পরিব্যাপ্ত ছিল। সুবর্ণচন্দ্র তাঁহার পুত্র, সুবর্ণচন্দ্রের পুত্র ত্রৈলোক্যচন্দ্র চন্দ্রদ্বীপের রাজা হন। তিনি হরিকেল-রাজের (বঙ্গেশ্বরের) প্রধান সহায় ছিলেন। তৎপুত্র শ্রীচন্দ্র একচ্ছত্র নৃপতি হইয়া পড়েন। এই “রোহিতাগিরি” লালমাই পর্ব্বতের সংস্কৃত নাম বলিয়া অনুমিত হইয়াছে। এই যুক্তিও চন্দ্রবংশীয় রাজাদিগের প্রথমাবস্থায় লালমাই-ময়নামতী পাহাড়ে অবস্থিতির সিদ্ধান্তের পক্ষেই অনুকূল এবং গোপীচন্দ্রের প্রধানতঃ মেহেরকুলে অবস্থানেরই পোষক, তবে গোপীচন্দ্রের রাজত্ব যে ময়নামতীর পাহাড়ের নিকটবর্ত্তী স্থানেই আবদ্ধ ছিল, ইহা হইতে এরূপ মীমাংসায় উপনীত হওয়া যায় না। রংপুর জেলায় যে সমস্ত পুরাতন স্মৃতিপূর্ণ স্থানের সংস্থান দেখিতে পাওয়া যায় তাহাতে সেখানেও যে তাঁহার বিলক্ষণ প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল এই মীমাংসাই স্বাভাবিক। সর্ব্বত্রই তিনি বঙ্গের রাজা বলিয়া কথিত হইয়াছেন। ময়নামতীর পাহাড় তখনকার বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল কিনা সন্দেহের বিষয়, করতোয়ার পূর্ব্ববর্ত্তী ভূভাগ কোন কোন মতে ছিল। করতোয়া তখন একটী বৃহৎ নদী, ইহার প্রবাহ স্বাভাবিক সীমা নির্দ্দেশক হইবারই কথা। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান প্রবাহ এক্ষণে সিরাজগঞ্জের নিম্নদেশ দিয়া যমুন। নামে প্রবাহিত, কিন্তু তখন এখানে কোন বড় নদীই ছিল না। ব্রহ্মপুত্র ইহার বহু পূর্ব্বদিকে ছিল। পদ্মা নদীর অস্তিত্ব তখন থাকিলেও বর্ত্তমান স্থানে বা বর্ত্তমান ভীষণ আকারে ছিল না।রাজ্যের পরিমাণ রংপুর হইতে ত্রিপুরা পর্য্যন্ত সমস্ত ভূভাগ গোপীচন্দ্রের শাসনদণ্ড স্বীকার করিত এরূপ অনুমান নিতান্ত অযৌক্তিক নহে। তিব্বতীয় গ্রন্থ হইতে ৺রায় শরচ্চন্দ্র দাস রায় বাহাদুর যে বিবরণ সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তদনুসারে গোপীচন্দ্রের পিতা বিমলচন্দ্র তীরভূক্তি, বঙ্গ ও কামরূপের রাজা ছিলেন, এবং চাটিগ্রামে গোপীচন্দ্রের বাজপাট ছিল। রংপুরের যোগীরা তাঁহাকে ২২ দণ্ডের রাজা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছে। তাহারা আপনাদের ঐশ্বর্য্যের মানদণ্ড দ্বারা রাজার ঐশ্বর্য্যের পরিমাপ করিতে গিয়া তাঁহার গৌরব খর্ব্ব করিয়া ফেলিয়াছে বলিয়াই মনে হয়। দুর্ল্লভ মল্লিকের গানে তিনি “সোলো দত্তের” রাজা বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। ভবানীদাসের মতে গোপীচন্দ্রকে চল্লিশ রাজা কর দিত। সুকুর মামুদ বলেন, তিনি ষোল বঙ্গের রাজা ছিলেন। কথাগুলির যে পরস্পর মিল আছে তাহা বলিতে পারি না, তবে ভবানীদাস ও সুকুর মামুদের বর্ণনা হইতে মনে হয়, রাজাটী নিতান্ত ছোট ছিলেন না। এক রাজার বাড়ী অবশ্য একাধিক স্থানে থাকিতে