পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯

যদি রংপুর অঞ্চলেই ময়নামতীর পিত্রালয় হয়, তাহা হইলে নির্ব্বাসিত অবস্থায় ফেরুসা নগরে ময়নামতীর কোটে তাঁহার অবস্থান বেশ সহজবোধ্য হইয়া পড়ে। সুকুর মামুদের মতে কিন্তু তিলকচাঁদের বাসস্থান সান্ত্বনা নগরে। সান্ত্বনা নগর কোথায় তাহা ঠিক করা যায় নাই। অবশ্য গোপীচাঁদ লালমাই পর্ব্বতে এবং ময়নামতী রংপুর জেলার ময়নামতীর কোটে অবস্থান করিলে উভয়ের দেখা শুনা অত্যন্ত কঠিন হইয়া পড়ে। কিন্তু মাণিকচন্দ্রের মৃত্যুর পরও ময়নামতীর সর্ব্বদা নির্ব্বাসিত অবস্থায় থাকা অনুমান করিবার কারণ নাই। আর গমনাগমনের সময় ও স্থানের দূরত্ব সম্বন্ধে যোগীদিগের গানে যাহা পাওয়া যায় তাহার উপর নির্ভর করা একেবারেই অসম্ভব।

ফা উপাধি পার্ব্বত্য ত্রিপুরা অঞ্চলে “ফা” উপাধি সম্মান-জ্ঞাপক। পার্ব্বত্য ত্রিপুরার অনেক প্রাচীন স্বাধীন রাজার নামের শেষভাগে “ফা” দেখিতে পাওয়া যায়। ইহাও হাড়িপা বা হাড়িফা গুরুর কার্য্যক্ষেত্র এই অঞ্চলে থাকার পক্ষে অনুকূল প্রমাণ।

গীতোক্ত স্থান সকল রংপুরের গাথায় উল্লিখিত শ্রীকলার বন্দর রংপুর জেলার সুপ্রসিদ্ধ কাকিনা গ্রাম হইতে অনতিদূরে, স্থানটী প্রাচীন। ডারাইপুর সহর ও কলিঙ্কার বন্দর কোথায় তাহা স্থির করা যায় নাই। কোন কোন স্থানে দারাইপুর গ্রাম বিদ্যমান আছে। ভবানীদাসের কলিকা বা কনিকা নগর শ্রীহট্ট জেলায় অবস্থিত কোলীন্য নগর হইতে পারে।[১] ত্রিপুরা জেলায় নবিনগরের নিকটও এক কলিকা নগর বিদ্যমান। নএয়ানগর বা নয়ানগড় প্রভৃতি স্থানের সংস্থান নির্ণয় বড়ই দুঃসাধ্য। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার নিকট নয়ানগর নামে এক গ্রাম আছে। ভবানীদাসের গুমু বা গোমৈদ নদী এখনও গোমতী নামে পরিচিত। ক্ষীরা নামক নদী লালমাই পর্ব্বত হইতে নির্গত হইয়া পাটিকারা ও গঙ্গামণ্ডল পরগণার মধ্য দিয়া মেঘনায় পড়িয়াছিল; এক্ষণে উহা শুষ্ক। তাঁহার সুরিপুনগর শৌণ্ডিকপল্লী হইতে পারে; কিন্তু জনৈক লেখক অনুমান করিয়াছেন, ইহা ত্রিপুরা জেলার উত্তর পশ্চিমাংশে অবস্থিত স্বরূপ নগর।[২]

রাজার জাতি গ্রীয়ার্সন সাহেবের প্রকাশিত “মাণিকচন্দ্র রাজার গানে” গোপীচন্দ্রের বেনিয়া জাতি ও ক্ষেত্রিকুল উক্ত হইয়াছি। সুকুর মামুদের গ্রন্থে মাণিকচন্দ্র রাজার পরিচয় স্থলে পাই “কূলে শীলে ছিল রাজা গন্ধের বণিক”। পূর্ব্বে আমি গোপীচন্দ্রকে রাজবংশী জাতীয় মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু উপরে লিখিত দুইটী বিভিন্ন গাথায় যখন মিল আছে এবং গোপীচন্দ্রের প্রধান রাজপাট যখন রাজবংশী জাতির প্রভাবের বহির্ভাগে পাওয়া যাইতেছে, তখন আমরা অন্য বিরুদ্ধ প্রমাণ না পাওয়া পর্য্যন্ত এই
  1. সাহিত্য পরিষৎ হইতে প্রকাশিত বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁখির বিবরণে ৫১৬ সংখ্যক পুঁথির পরিচয় দ্রষ্টব্য।
  2. ইতিহাস ও আলোচনা, পৌষ ১৩২৮