পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০

গ্রন্থোক্ত পরিচয় গ্রহণ করিতেই বাধ্য। চাঁদ বেনিয়ার সহিত জ্ঞাতিত্বের উল্লেখও এই মতেরই পোষক।

গোপীচন্দ্রের উত্তরপুরুষ গোপীচন্দ্রের উত্তরপুরুষের পরিচয় সম্বন্ধেও মতভেদ আছে। ভবানীদাস লিখিয়াছেন:—

“ গুপিচান্দের বংশ নাহি ভুবন যুড়িয়া” (পৃঃ ৩৫৩)

রংপুর অঞ্চলের প্রবাদ অনুসারে কিন্তু তাঁহার পুত্রের নাম উদয়চন্দ্র বা ভবচন্দ্র। রংপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চলে বাগ্‌দুয়ার পরগণায় ভবচন্দ্রের বাস-ভবনের ধ্বংসাবশেষ এখনও প্রদর্শিত হইয়া থাকে এবং ভবচন্দ্রের বা হবচন্দ্রের নির্ব্বুদ্বিতার অনেক গল্প এখনও ঠাকুরমার ঝুলি অন্বেষণ করিলে প্রাপ্ত হওয়া যায়। কৈলাসচন্দ্র সিংহ মহাশয়ও ত্রিপুরা জেলার চৌদ্দগ্রাম ও তৎসন্নিহিত স্থানে ভবচন্দ্র নামে এক রাজার ও তৎসম্বন্ধে অলৌকিক গল্পের উল্লেখ করিয়াছেন। সম্ভবতঃ রংপুরের ভবচন্দ্র ও চৌদ্দগ্রামের ভবচন্দ্র অভিন্ন। মাণিকচন্দ্র ও গোপীচন্দ্রের ত্রিপুরা ও রংপুর জেলা উভয় অঞ্চলে রাজত্ব থাকিলে তদ্বংশীয় ভবচন্দ্রের না থাকিবার কথা কি?

 গ্লেজিয়ার সাহেব তাঁহার রংপুরের বিবরণে উল্লেখ করিয়াছেন যে, এ জেলায় খৃঃ অষ্টাদশ শতাব্দীতে পায়রাবন্দ নামক স্থানে কতকগুলি মুদ্রা পাওয়া গিয়াছিল এবং এক বৃদ্ধ তাঁহাকে বলিয়াছিল যে, তাহার একটীর উপর এক দিকে ভবচন্দ্র রাজার নাম ও অপরদিকে তাঁহার গৃহদেবী বাগীশ্বরী খোদিত দেখা গিয়াছিল। দুঃখের বিষয় গোপীচন্দ্র বা ভবচন্দ্রের কোন মুদ্রা বা খোদিত লিপির পরিচয় এ পর্য্যন্ত পাওয়া যায় নাই। পাওয়া গেলে এই যুগের ঐতিহাসিক রহস্য উদ্ঘাটনের বিশেষ সহায়তা ঘঠিত।

পালরাজগণ সম্পর্কে বুকানন হ্যামিল্টন প্রভৃতির মত খণ্ডন আমরা আপাততঃ গোপীচন্দ্রকে গন্ধবণিক জাতীয় এবং খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর লোক বলিয়া গ্রহণ করিলাম। তিনি যদি শিলালিপির গোবিন্দচন্দ্র না হন, তবে আরও পূর্ব্ববর্ত্তী হইতে পারেন, কিন্তু পরবর্ত্তী সময়ের লোক হওয়ার কোনই সম্ভাবনা দেখা যায় না। পরবর্ত্তী সময়ে বঙ্গে বর্ম্মবংশ ও সেনবংশের রাজত্ব দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার পর ত মুসলমান প্রভাব। গোপীচন্দ্রের যে বংশে জন্ম সেই বংশ সময়ে সময়ে রাজনৈতিক হিসাবে পালবংশের সহিত সংসৃষ্ট থাকা অসম্ভব নহে, কারণ শ্রীচন্দ্রের তাম্র শাসনে পালবংশের রাজমুদ্রা লক্ষিত হয়, কিন্তু সাহেবেরা মাণিকচন্দ্র ও ময়নামতীর সহিত রাজা ধর্ম্মপালের যেরূপ সম্বন্ধের অবতারণা করিয়াছেন তাহা নিতান্তই ভিত্তিহীন বলিয়া মনে হয়। তাঁহারা বলেন, মাণিকচাঁদ ধর্ম্মপালের ভ্রাতা, সুতরাং ধর্ম্মপাল গোপীচাঁদের পিতৃব্য ছিলেন, মাণিকচাঁদের মৃত্যুর পর রাজ্য