পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২

রাজা ছিলেন, এরূপ বিশ্বাস করিবার কোন উপযুক্ত কারণই নাই। আমরা আমাদের বর্ত্তমান জ্ঞানে মাণিকচাঁদের ও গোপীচাঁদের যে সময় নির্দ্ধারণ করিয়াছি তাহাও পালবংশীয় বিখ্যাত রাজা ধর্ম্মপালের বহু পরবর্ত্তী।

ময়নামতী গোপীচাঁদের মাতা ময়নামতী যে অত্যন্ত প্রভাবশালিনী রমণী ছিলেন তাহা নিঃসন্দেহ। গোপীচাঁদের বৈরাগ্য সিদ্ধার্থের বা নিমাইএর বৈরাগ্যের ন্যায় স্বেচ্ছা-প্রণোদিত নহে, ইহা শক্তিশালিনী মাতার ঐকান্তিক চেষ্টার ফল। ময়নামতীর পিতা তিলকচাঁদ কোন কোন স্থানে রাজা বলিয়া বর্ণিত হইয়াছেন। রাজমহিষীর পিতা বলিয়া অজ্ঞ গাথালেখকের নিকট তিনি এই সম্মানের অধিকারী হইয়াছেন কিনা বলা কঠিন। তিব্বতীয় বিবরণ অনুসারে ময়নামতী মালবরাজ ভর্ত্তৃহরির ভগিনী এবং তাঁহার অপর পুত্র ললিতচন্দ্র ভর্ত্তৃহরির পরে মালবের রাজসিংহাসনারোহণ করেন। হিন্দী গাথার সহিত কিছু মিল থাকিলেও বাঙ্গালার কোন গাথাতে ইহার বিন্দুমাত্র আভাষ না থাকায় আমরা এই মত গ্রহণ করিতে সাহস পাইলাম না। রংপুরের গাথায় ময়নামতীর অন্য কোন নাম ছিল বলিয়া জানা যায় না। অন্য গীতি-লেখকগণ কেহ বলেন তাঁহার বাল্যকালের নাম শিশুমতি, কেহ বলেন সুবদনী। তিনি যে অতি অল্প বয়সে গোরক্ষনাথকে সন্তুষ্ট করিয়া তাঁহার নিকট দীক্ষা প্রাপ্ত হন ও অশেষ শক্তিশালিনী হইয়া উঠেন, ইহা সকলেরই মত। কালে এ দেশীয় অনেক ক্ষমতাশালী লোকের অদৃষ্টে যে সম্মান ঘটে, ময়নামতীর অদৃষ্টেও তাহা ঘটিয়াছে। ত্রিপুরা জেলা তাঁহার নামে একটী পাহাড়কে অভিহিত করিয়াছে। রংপুর জেলা কেবল তাঁহার কোট বা পরিখা-প্রাচীর বেষ্টিত বাসস্থানের স্মৃতি রক্ষা করিয়া ক্ষান্ত হয় নাই, ময়নাবুড়ী নামে তাঁহাকে দেবতায় পরিণত করিয়া রীতিমত পুষ্প-চন্দন-নৈবেদ্যাদির ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছে। কালে নৃমুণ্ডনালিনী দেবীর সহিত তাঁহার অভিন্নত্ব কল্পিত হইয়াছে। ময়নাবুড়ীর পুজা এখনও তাঁহার কোটের প্রাচীরের উপর সাদরে অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। তিনি জীবিতাবস্থায় মাংসাহারিণী ছিলেন কিনা জানিনা, কিন্তু এখন তাঁহার তৃপ্তিরপূজার পুরোহিত জন্য ছাগ-শিশুর মস্তক অম্লান বদনে প্রদত্ত হইয়া থাকে। তাঁহার ব্রাহ্মণ নহে, রাজবংশী-জাতীয় দেওদা। পূজার মন্ত্র চণ্ডীপূজার মন্ত্রের রাজবংশী সংস্করণ। ডিমলা থানার অন্তর্গত আটিয়াবাড়ী গ্রাম-নিবাসী জাকইদাস দেওদার নিকট যে মন্ত্রটী সংগৃহীত হইয়াছিল নিম্নে তহো উদ্ধৃত হইল।[১]

  1. মন্ত্রটী পূর্ব্বে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত করা হইয়াছে।