পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬

তাহাদের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানারূপ কিংবদন্তী প্রচলিত। সম্ভবতঃ তাহারা বিভিন্ন জাতি হইতে উৎপন্ন একটী প্রাচীন ধর্ম্ম সম্প্রদায়ের ভগ্নাবশেষ। এখনও রংপুরের যুগীদিগের ধর্ম্মই প্রধান উপাস্য দেবতা; গোরক্ষনাথ, ধীরনাথ, ছায়ানাথ, রঘুনাথ প্রভৃতি স্মরণীয় মহাপুরুষ। ভিক্ষাদ্বারা তণ্ডুল সংগ্রহ করিয়া বৈশাখ ও কার্ত্তিক মাসে ইহাদিগকে ধর্ম্ম পূজা করিতে হয়। এই পূজায় হংস পারাবতাদি উৎসর্গ করা হয়, কিন্তু নিহত করা হয় না। যে কোন সময়ে সন্ন্যাসি-পূজা করিবার প্রথা আছে, হরিঠাকুরের পূজাও প্রচলিত হইয়া পড়িয়াছে। ধর্ম্মর কোন প্রতিমা নির্ম্মিত হয় না। যুগীদিগের গুরু ও পুরোহিত স্বজাতীয়। পুরোহিতদিগকে অধিকারী বলা হয়; স্ত্রীলোকেরা অধিকারীর মধ্যস্থতা ব্যতীতই পূজার কার্য্য নির্ব্বাহ করে। জন্মের পর ক্ষৌরকার দ্বারা সন্তানের কর্ণ চিরিয়া দেওয়া অবশ্য কর্ত্তব্য। তিন বৎসর বয়সে গুরুর মন্ত্র গ্রহণ করিতে হয়, নতুবা শিশুর পংক্তি-ভোজনে অধিকার জন্মে না। মৃতদেহ ষোড়াসন বা যোগাসনে সমাধিস্থ করা হয়। ধর্ম্মঠাকুরকে কোন কোন স্থানে চূণ উপহার দেওয়া হয় বলিয়া শুনা যায়। চূণবিক্রয় ও ভিক্ষা রংপুরের যোগ বা যুগীদিগের প্রধান উপজীবিকা। ঢাকা ও ত্রিপুরা জেলায় বস্ত্রবয়ন প্রধান কার্য্য। উচ্চশ্রেণীর হিন্দুর অনুকরণে স্থানে স্থানে ক্রমশঃ সামাজিক প্রথা পরিবর্ত্তিত হইতেছে। সমাধির পরিবর্ত্তে মৃতদেহের অগ্নিসংস্কারও কোন কোন স্থানে দেখা দিয়াছে। শৈব ও বৈষ্ণব মত ক্রমশঃ বিলক্ষণ আধিপত্য বিস্তার করিতেছে। এই গ্রন্থে অনেক স্থলেই বৌদ্ধদিগের উপাস্য ধর্ম্মদেবের প্রাধান্য বর্ণিত হইয়াছে; সুকুর মামুদের গ্রন্থে শূন্যরাজকে ডাকার কথা আছে। রংপুরের যোগীরা আপনাদিগকে অনাদিগোত্র, শিব বংশ বলিয়া পরিচয় প্রদান করে। এক শ্রেণীর যুগী শূকর ও কুক্কুট মাংস ভোজন, মদিরা সেবন ও বাদ্যকারের কার্য্য করে।[১]

 রংপুরের যোগীদিগের মধ্যে হরপার্ব্বতী লইয়া অনেক গান প্রচলিত দেখিতে পাওয়া যায়। ধর্ম্ম পূজার ২টী গান নিম্নে উদ্ধৃত হইল।

ধর্ম্ম পূজার গান

(১) উঠ উঠ ধর্ম্ম মাতা ধর্ম্ম কর সার।
শিব শঙ্খ দুইটা পুজা ধরম দুআর॥
চণ্ডি বলে শুন গোসাই জটিয়া ভাঙ্গেড়া।
তোমার সঙ্গে আও করিলে নাগিবে ঝগড়া॥

  1. নাথপন্থ ও যোগি-জাতি স্বম্বন্ধে অনেক জ্ঞাতব্য কথা ১৩২৮ ও ১৩২৯ সনের প্রবাসীতে শ্রীযুক্ত অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ মহাশয় লিখিত প্রবন্ধগুলিতে আছে। ইহা ব্যতীত ডাঃ ওয়াইজএর লিখিত বিবরণ, রিজলি সাহেবের Castes ard Tribes of Bengal, বাঙ্গালা দেশের অদমশুমারি রিপোর্ট ইত্যাদি দ্রষ্টব্য।