পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩

পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। তাহা হইলেও ইহা স্থানে স্থানে যে খুব প্রাচীন তাহা গাথা পাঠ করিলেই বুঝিতে পারা যায়। ভবানীদাসের ও সুকুর মামুদের গাথা হস্ত-লিখিত পুঁথি হইতে সংগৃহীত। ইঁহাদের ভাষা পরিবর্ত্তনের কোন কারণ উপস্থিত হয় নাই। ভবানীদাস খুব সম্ভবতঃ প্রায় ৩০০ বৎসর পূর্ব্বের লোক। রামাভিষেক বা দিগ্বিজয় ও রাম স্বর্গারোহণ নামক কাব্য ইঁহারই রচিত বলিয়া কথিত হইয়াছে। তন্মধ্যে রামাভিষেক কাব্যের রচয়িতা আমাদের আলোচ্য ভবানীদাস বলিয়া মনে হয় না। দুই গ্রন্থে ভাষাগত পার্থক্য বেশ পরিস্ফুট। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ্ হইতে প্রকাশিত প্রাচীন পুঁথির বিববণে ৪৩৪ ও ৫৯৯ সংখ্যক পুঁথির পরিচয়ে দেখিতে পাওয়া যায় এই কাব্যের রচয়িতার প্রকৃত নাম ভবানীনাথ; আমাদের কবির নাম ভবানীদাস। স্বর্গারোহণ কাব্যের রচয়িতা ভবানীদাস আপনাকে কমলজ দেব বা বামন দেবের ও যশোদা দেবীর পুত্র বলিয়া পরিচয় প্রদান করিয়াছেন। তাঁহার পাটিকারায় বসতি ছিল এবং তিনি কিছুদিন নবদ্বীপের নিকট বদরিকাশ্রমে বাস করিয়াছিলেন জানিতে পারা যায়।

“নবদ্বীপ বন্দম অতি বড় ধন্য।
যাহাতে উৎপত্তি হল ঠাকুর চৈতন্য।
গঙ্গার সমীপে আছে বদরিকাশ্রম।
তাহাতে বসতি করে ভবানীদাস নাম”।[১]

 ইহা হইতে বুঝিতে পারা যায় যখন চৈতন্থদেব-প্রবর্ত্তিত বৈষ্ণব ধর্ম্ম বেশ প্রভাবযুক্ত সেই সময়েই এই কবির আবির্ভাব। তিনি খৃঃ ষোড়শ শতাব্দীর পূর্ব্ববর্ত্তী মনে করিবার কোন কারণ নাই। তিনি পাটিকাবার লোক এবং ষোড়শ শতাব্দী বা তৎপরবর্ত্তী সময়ের কবি স্মরণ রাখিলেই আমাদের আলোচ্য গ্রন্থের কবি বলিয়া স্বভাবতঃই মনে হইবে। ত্রিপুরা জেলায় যে জয়চন্দ্রের নামাঙ্কিত বুদ্ধমূর্তি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তিনি গোপীচন্দ্রের বংশীয় রাজা হইতেও পারেন, কিন্তু আমাদের ভবানীদাস কখনও অত প্রাচীন কালের লোক হইতে পারেন না। রামাভিষেক কাব্যের রচয়িতা হয়ত অন্য কোন জয়চন্দ্রের আশ্রয় লাভ করিয়াছিলেন। তিনি জয়চন্দ্রের পরিচয় দিতে গিয়া লিখিয়াছেন—“জয়চন্দ্র নরপতি স্বদেশী ব্রাহ্মণ”।[২] গোপীচন্দ্রের বংশীয় জয়চন্দ্র কখনও “স্বদেশী ব্রাহ্মণ” হইতে পারেন না। সুকুর মামুদ কোন্ সময়ের লোক তাহাও

  1. বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, তৃতীয় সংস্করণ ৫১৫ পৃঃ।
  2. সাহিতা পরিষৎ কর্ত্তৃক প্রকাশিত বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণে ৪৩৪ সংখ্যক গ্রন্থের পরিচয়। ৫৯৯ সংখ্যক গ্রন্থের পরিচয়ে “সাদাস ব্রাহ্মণ” পাঠ উদ্ধৃত হইয়াছে। “সাদাস্” সম্ভবতঃ লিপিকর প্রমাদ!