পাতা:গোপীচন্দ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুখবন্ধ

চোল স্বদেশে নিজ খ্যাতি বাড়াইবার উদ্দেশ্যে স্বীয় সভাকবির দ্বারা যদি বঙ্গজয় ঘোষণা করাইয়া থাকেন, তাহাতে আশ্চর্য্যের বিষয় কিছুই নাই। সুতরাং তিরুমলয়ের লিপিকারের উক্তি সম্বন্ধে আমরা আস্থাবান্ হইতে পারিতেছি না। বিশ্বেশ্বর বাবু, আমি এবং বসন্ত বাবু তিনজনে মিলিয়া গোপীচন্দের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত সম্বন্ধে অনেক আলোচনা করিয়াছি―তাহার ফলাফল বিশ্বেশ্বর বাবু নিরপেক্ষ ভাবে তৎরচিত ভূমিকায় লিখিয়াছেন—নানারূপ গ্রাম্য সংস্কার, বিরুদ্ধ পাঠ ও ভ্রমপ্রমাদের মধ্য হইতে আমরা যে দুই একটি তথ্যকে ঐতিহাসিক সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছি, তন্মধ্যে প্রথমটি এই যে তিরুমলয়ের গোবিন্দ্রচন্দ্র এবং আমাদের এই গোবিন্দচন্দ্র বা গোপীচন্দ্র খুব সম্ভব এক ব্যক্তি। দ্বিতীয় কথাটি এই যে শ্রীযুক্ত নলিনীকান্ত ভট্টশালী মহাশয় ধাড়িচন্দ্রকে টানিয়া বুনিয়া চন্দ্রবংশের জনৈক নৃপতির নামের সঙ্গে মিলাইবার জন্য উৎকট চেষ্টা করিয়াছেন, তাঁহার সেই সিদ্ধান্তের উপর আমরা কোনরূপ আস্থা স্থাপন করিতে পারিতেছি না। কিন্তু তথাপি মহারাষ্ট্র গীতে “ত্রৈলোক্যচন্দ্র” ও দুর্ল্লভ মল্লিকের গানে “সুবর্ণচন্দ্র”―তাম্রশাসনোক্ত চন্দ্রবংশের চারিজন রাজার মধ্যে এই দুই জনের নামের ঐক্য পাইয়া আমরা গোপীচন্দ্রকে বিক্রমপুরের শ্রীচন্দ্রদেবের বংশীয় বলিয়াই মনে করিতেছি। এই কথা ভট্টশালী মহাশয়ই প্রথম বলিয়াছেন, তজ্জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ দিতেছি। বংশলতাসম্বন্ধে গ্রাম্য গীতে গোলমাল থাকা কিছুই আশ্চর্য্যের বিষয় নহে, এমন কি সেদিনকার নিত্যানন্দ প্রভুর বংশাবলীতে তাঁহার পিতামহের নামের পূর্ব্বে যে সকল নাম তিনটি ভিন্ন স্থান হইতে পাওয়া যাইতেছে, তাহাদের কোনটিতে মিল নাই। তথাপি ভিন্ন ভিন্ন স্থান হইতে প্রাপ্ত অতি বিরুদ্ধ উপকরণের মধ্যেও চারিটি রাজার নামের মধ্যে যখন দুইজনের নামের মিল পাইতেছি, তখন আমরা গোপীচন্দ্রকে উক্ত চন্দ্রবংশীয় রাজা বলিয়া গ্রহণ করার পক্ষপাতী। নবদ্বীপের সুবর্ণ বিহার এই বংশের সুবর্ণচন্দ্র রাজার দ্বারা নির্ম্মিত হওয়াই সম্ভবপর। স্বর্গীয় মহামহোপাধ্যায় অজিতনাথ ন্যায়রত্ন মহাশয় সুবর্ণবিহারে একটা খোদিত ইষ্টক লিপির যে তারিখ পাইয়াছিলেন তাহাও এই সিদ্ধান্তেরই অনুকূল। চারিজনের মধ্যে এই যে দুই রাজার নামের মিল