গোবিন্দ দাসের করচ উদ্ধারের ইতিহাস প্রায় ৪৫ বৎসর গত হইল একদিন শান্তিপুর নিবাসী কালিদাস নাথ কয়েক খানি বৈষ্ণব গ্রন্থ (পুথি আমার পিতৃদেব ৮জয়গোপাল গোস্বামীর নিকট লইয়া আসেন * । এই পুস্তকগুলির মধ্যে একখানি "গোবিন্দদাসের করচা’ ও একখানি অদ্বৈত বিকাশ’ গ্রন্থ ছিল। বাব। এই দুইখানি পুস্তক অপ্রকাশিত প্রাচীন পুস্তক মনে করিয়া পড়িবার নিমিত্ত গ্রহণ করেন। কালিদাস প্রথমতঃ পুস্তক দুইখানি প্রদান করিতে ইতস্ততঃ করেন, পরে বাবার সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধে কয়েক দিনের জন্ত প্রাচীন পুথি দুইখানি তাহার নিকট রাখিয়া যান। পিতৃদেব অতি সত্বর লিখিতে পারিতেন, তিনি কয়েক দিনের মধ্যে এই পুথি দুইখানি নকল করিয়া ফেলেন । কয়েক বৎসর পরে পিতৃদেব ঐ পুথির দুই তিনটি ফরম (র্তাহার স্বহস্তলিখিত) শিশির বাবুর নিকট লইয়া আসেন। শিশির বাবুর সঙ্গে বাবার পুৰ্ব্বে আলাপ ছিল না। তিনি পরম গৌরাঙ্গভক্ত একথা জানিতে পারিয়া তাহাকে দেখাইবার নিমিত্ত উৎসুক হন। যে আম খাইতে ভাল বাসে এবং আমের মর্য্যাদা উপলদ্ধি করে, তাহাকে আম খাওয়াইবার নিমিত্ত বাগানের মালিক ব্যগ্র হইয় উঠে। গোস্বামী মহাশয় শিশিরকুমারকে গৌরাঙ্গপ্রেমরসের রসিক মনে করিয়াই তাহার নিকট এই চৈতন্ত্যগুণগাথা লইয়া গিয়াছিলেন । শিশির বাবুগুণগ্রাহী ছিলেন, তিনি করচার কয়েক পৃষ্ঠা পড়িয়াই দুগ্ধ হন। এবং পিতৃদেবকে সমস্ত পুথিখানি তাহার হস্তে অর্পণ করিবার জন্ত অনুরোধ করেন। কিন্তু পিতৃদেব বলেন ‘আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, এই পুস্তক খানি নিজেই প্রকাশ করিব সঙ্কল্প করিয়াছি। আমার কোন কোন গৌরাঙ্গ-ভক্ত সুপণ্ডিত বন্ধু বলেন, এই পুস্তক প্রকাশ করিলে কিছু অর্থাগম হইবার সম্ভাবনা ’ শিশির বাবু তদুত্তরে বলেন তবে ইহা আপনিই প্রকাশ করুন। যে কয়েক পৃষ্ঠ আপনি আনিয়াছেন, তাহ রাখিয়া যান। আমি পড়িয়া সাত দিনের
- এক খানি চিঠিতে বনোয়ারীলাল আমাকে আরও কয়েকটি কথা বেশী লিখিয়াছেন—তাহা এই “আমার মনে আছে কালিদাস বলিয়াছিলেন “করচার ভাষা অতি নিৰ্ম্মল, কোথাও অতিরঞ্জিত হয় নাই, প্রসাদগুণে পুস্তকখানি পূর্ণ। একে প্রাচীন অপ্রকাশিত গ্রন্থ, তাহার উপর ভাষার সারল্য-তারল্য, ইহ পিতৃদেবকে একান্ত আকৃষ্ট করিল। তখনই গোবিন্দদাসের করচায় অধ্যয়ন আরম্ভ হইল। কয়েক পৃষ্ঠা অধ্যয়নের পরই স্বৰ্গীয় মদন গোস্বামী মহাশয় সে স্থানে উপস্থিত হইলেন, বাবা আগ্রহের সহিত বলিলেন “মদন, এক অপূৰ্ব্ব পুস্তক—আবার গোড়া হইতে পড়ি, শুনিয়া ষাও । ”
শ্ৰীদীনেশচন্দ্র সেন । 학