৭২ গোবিন্দ দাসের করচা যত খাই নানা ফল দেখিবারে পাই । খড়িয়াতে লই আর পেট ভোরে খাই। মানুষের গন্ধ নাই নিবিড় জঙ্গলে । মাঝে মাঝে হরিধ্বনি করিছে সকলে ॥ ন হইতে সন্ধ্যা পথে হইল আঁধার। এক বৃক্ষতলে বৈসে শচীর কুমার ॥ মাঝে মাঝে রাজা স্থান দিয়াছে করিয়া । সেই স্থানে প্রভু সঙ্গে উতরাই গিয় ॥ বন্ত কাষ্ঠে ঘেরা স্থান ঘর দ্বার নাই । সন্ন্যাসীরা এই খানে বসিলা সবাই ॥ করতালি দিয়া প্রভু নাম আরম্ভিল। নাম শুনি সন্ন্যাসীরা মাতিয়া উঠিল। কাষ্ঠ আহরিয়া দিলা অগ্নিকুণ্ড জালি ভৰ্গদেব নাম করে দিয়া করতালি । সেই জঙ্গলের মাঝে ভয় নাহি পাই । হরিনাম করি সবে রজনী পোহাই ॥ পরদিন প্রাতঃকালে হরিধ্বনি করি। বাহির হইলা গোরা স্মরিয়া শ্ৰীহরি ॥ যত পথ যাই তত জঙ্গল গভীর। দেখিলে,সে ঝারি খণ্ড কাপয়ে শরীর। বহুদূর গিয়া পাই ক্ষুদ্র এক খাল । সেই থানে স্নান করে শচীর দুলাল ॥ স্বান করি দ্রুতগতি অগ্রে চলে যাই। কতদূর অগ্ৰে গিয়া বসিলা সবাই । ফল আনিবারে প্রভু রামানন্দে বলে। রামানন্দ ফল আনি রাখে সেই স্থলে ॥ নানাবিধ ফল আনে সংগ্ৰহ করিয়া । পূজা করি ভোগ দেয় গোরা বিনোদিয়া । এমন মধুর ফল কভু দেখি নাই। সবে মিলি উদর পুরিয়া ফল খাই ॥ সহস্ৰ লোকের খাদ্য পথে পড়ে থাকে। ঈশ্বরের কত দয়া কহিব কাহাকে ॥ মধ্যাহ্নে সারিয়া কাজ মোরা চলে যাই। অপরাহ্নে গিয়া সবে আর আডড পাই ॥ জঙ্গলের পাশে স্থান ঘেরা খুটি দিয়া । সেই স্থানে প্রবেশিলা গোরা বিনোদিয়া ॥ কাষ্ঠ আনি সন্ন্যাসীরা আগুণ জালিল। বস্তুতালি দিয়া প্রভূ গান আরম্ভিল । হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ হরে । যখন তখন প্রভু এই গান করে। গাইতে গাইতে দেখি হইল অস্থির পুলকে পূরিল প্রভু কাপিল শরীর। উচ্চৈঃস্বরে কান্দিতে লাগিল গোর রায় । দেখিয়া তাহার ভাব ভর্গ ফুকারায় ॥ ৬ পরদিন যাই চলে প্রভাতে উঠিয়া । এক দল যাত্রী পথে আসিছে ফিরিয়া ॥ পথমধ্যে দেখা যবে হৈল দুই দলে । আনন্দেতে হরিধ্বনি করিল সকলে ॥ এইরূপে সাত দিনে ধম্বিধর ঝারি। পার হয়ে যাই সবে আনন্দ বিথারি ॥ নিকটে অমরাপুরী গোপীতলা নাম। সেই খানে যাই সবে আনন্দের ধাম ॥ ইহাকে প্রভাস তীর্থ বলে সৰ্ব্বজনে । প্রভাস দেখিয় বড় প্রতি পাই মনে ॥ যদুগণ যেখানে ত্যজিল কলেবর। সেই থানে প্রভু গিয়া কান্দিলা বিস্তর ॥ মধু পানে মত্ত হয়ে যত যদুবীর। পরস্পর যুদ্ধ করি ত্যজিল শরীর।
- কুকরীয়-মাঝে মাঝে কাদিয়া ওঠাকে “ফুকরায়" বলে।