२२ গোবিন্দ দাসের করচা জানাইয়াছিলেন। পাণ্ডুলিপি খোয়৷ যাইবার কয়েক ৎসর পরে কিরূপে তিনি শাস্তিপুর বাসী ৮হরিনাথ গোস্বামী মহাশয়ের নিকট হইতে প্রাপ্ত আর এক খানি খণ্ডিত পুথি দৃষ্টে এবং তাহার নিজ কৃত নোট হইতে বহু কষ্টে লুপ্ত পত্র গুলির পাঠোদ্ধার করিয়া ছিলেন, তাহা তিনি আমাকে জানাইয়াছিলেন। কিন্তু শিশির বাবুর হ্যায় ব্যক্তি যখন বলিলেন যে পাণ্ডুলিপিতে কায়স্থ পাঠ ছিল—“কৰ্ম্মকার পাঠ ছিলনা, তখন একদল লোক খুব জোরের সহিত করচায় এই ৫১ পৃষ্ঠা জাল বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে দাড়াইয়াছিলেন, সুতরাং এই বিরোধের উৎপত্তি জাতি-মূলক বিষয় লইয়া । আর একটা কারণে সম্ভবতঃ এই প্রতিবাদ উৎপন্ন হইয়াছিল। বনোয়ারীলাল গোস্বামী মহাশয় তাহারও আভাস দিয়াছেন। যখন জয় গোপাল পণ্ডিত মহাশয় করচার পাণ্ডুলিপি লইয়া শিশিরবাবুর নিকট উপস্থিত হন, তিনি তখন এই পুস্তক খানি স্বয়ং অমৃতবাজার পত্রিকা অফিস্ হইতে বাহির করিবেন এই অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়া তাহ পণ্ডিত মহাশয়ের নিকট চাহিয়াছিলেন, পণ্ডিত মহাশয় তাহা দেন নাই। যদি তিনি দিতেন এবং অমৃতবাজার পত্রিকা-আফিস্ হইতে পুস্তক খানি বাহির হইত, তবে ইহার বিরূদ্ধে সম্ভবতঃ কোন আন্দোলন হইত না । সুতরাং কি ভাবে এই পুস্তকের বিরুদ্ধে প্রথম আক্রমণ আরদ্ধ হয় তাহার একটা ইতিহাস পাওয়া গেল। এদেশে একটা কিছু আরম্ভ হইলে তাহার ঢেউ অনেক দিন চলিতে থাকে, কারণ বাঙ্গালীর বাজে কাজ করিবার সময় যথেষ্ট আছে। সুতরাং সেই যে আন্দোলন মুরু হইল, এখনও তাহা চলিতেছে, ইহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার কথা কিছুই নাই । কিন্তু ধৰ্ম্মের ঢাক শীঘ্রই বাজিয়া উঠিল। ইহার মধ্যে সাহিত্য-পরিষদ হইতে জয়ানন্দের “চৈতন্য মঙ্গল’ নামক এক থানি সুপ্রাচীন গ্রন্থ প্রকাশিত হইল। কয়েক খানি প্রাচীন পুথি দেখিয়া শ্ৰীযুক্ত প্রাচ্য বিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্ৰ নাথ বসু এবং ৮কালিদাস নাথ মহাশয়দ্বয় বইখানি সম্পাদন করেন। এই পুস্তকের বৈরাগ্য খণ্ডে স্পষ্ট-ই লিখিত আছে মহাপ্রভূর সন্ন্যাসের সহচর ছিলেন “গোবিন্দ কৰ্ম্মকার”। এই আবিষ্কারের ফলে প্রতিবাদীর দল নিরস্ত হইয়া গেলেন । তথাপি তাহারা একবার চেষ্টা পাইয়া ছিলেন–গোটা জয়ানন্দের চৈতন্ত মঙ্গলের পুথি খানি জাল বলিয়া উড়ায় দিতে। কিন্তু সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় ৫ম খণ্ডে প্রকাশিত নগেন্দ্র বাবুর একটা অব্যর্থ উত্তরে তাহাদের চেষ্টা পও হইয়া গেল ; এবং ইহার পরে যখন নগেন্দ্র বাবু স্বয়ং দেওঘরে যাইয়া শিশির বাবুকে জয়াননের চৈতন্ত মঙ্গলের ২••৩০০ বৎসরের প্রচীন পুথির পাঠ দেখাইলেন, তখন তাহার অবিশ্বাস করিবার আর কোন কারণ রছিল না। জয়গোপাল গোস্বামী যে “কায়স্থ পাঠ কাটিয়া ‘কৰ্ম্মকার পাঠ কল্পনা বলে স্থাপন করেন নাই—ইহা তখন সকলেই বুঝিলেন। ইহার পর প্রায় ২৭। ২৮ বৎসর কাল প্রতিবাদিগণ একেবারে নীরব হইয়া ছিলেন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের প্রতি অযথা অভিযোগের উৎসাহ দীর্থ-কালের জন্য প্রশমিত ছিল ।
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।