ভূমিকা .ՀG করিবার জন্য। তিনি রুদ্ররূপী ভগবান—ইহা প্রমাণ করিতে যাইয়া কোন কোন লেখক বর্ণনা করিয়াছেন যে তিনি ঘর বাড়ী ভাঙ্গিয়া চুড়িয়া একাকাব করিতেছেন এবং এরূপ ভীষণ হইয়া দাড়িয়াছেন যে নিজ জননীকেও মারিয়া মুচ্ছিত করিয়া ফেলিতেছেন (চৈ, চ, আদি ৩য়, পঃ, এবং ঐ আদি ১৪ পঃ ৬ শ্লোক ) । এরূপও বর্ণিত আছে যে তিনি বাজিকরের মত কখনও বা জামিরের গাছে কদম্ব ফুল উৎপন্ন করাইতেছেন ( অস্ত্য, ৫ম ) এবং “ এক আম্র বীজ প্ৰভু অঙ্গনে রোপিল। তৎক্ষণে জন্মিল বৃক্ষ বাড়িতে লাগিল ৷ দেখিতে দেখিতে বৃক্ষ হইল ফলিত। পাকিল অনেক ফল সবাই বিস্মিত ” ( চৈ, চ, অদি, ১৭ পঃ ৬৫ শ্লোক ) । এরূপ উদাহরণ কত দিব ? এই সব প্রসিদ্ধ গ্রন্থ খুজিলে পাঠক এরূপ আরও অনেক দৃষ্টান্ত পাইবেন। গোড়া বৈষ্ণব দলের মধ্যে কেহ কেহ শিক্ষিত হইলেও এই সকল সংস্কারের হাত এড়াইতে পারেন নাই। তাহারা চৈতন্তের এই বিভূতি—এই ঐশ্বৰ্য্য সকলই প্রামাণিক মনে করেন। কিন্তু গোবিন্দদাসের করচায় এই সকলের কিছুই নাই। “শ্ৰীকৃষ্ণের যত খেলা, সৰ্ব্বোত্তম নরলীলা”—করচা-অঙ্কিত চৈতন্য দেবের মূৰ্ত্তিতে নরলীলার মহিমাই প্রচুর পাওয়া যায়, সুতরাং যাহারা ঐ সকল অতি-প্রাকৃত কাহিনী শুনিয়া চৈতন্যদেবের মূৰ্ত্তি হৃদয়ে অঙ্কিত করিতে অভ্যস্ত হইয়াছেন তাহাদের কাছে করচার অনাড়ম্বর মনুষ্য-দেবটিকে একটু বেখাপ্পা ঠেকিবে। এই জন্য র্তাহাদের মতে যে সকল গ্রন্থ প্রামাণিক, তাহাদের মধ্যে যদি গরমিল থাকে তবে তাহারা চক্ষু বুজিয়া চলিয়া যান, কিন্তু করচার চৈতন্য যে অনেকটা নূতন আদর্শ। ইহাতে তাহার অলৌকিকত্বের কথা অতি অল্পই আছে। মথুরার রাজরাজেশ্বর শ্ৰীকৃষ্ণ যদি হঠাৎ তাহার প্রজাদের মধ্যে পাচনবাড়ি হাতে এবং গরু বান্ধিবার দড়ি লইয়া রাখালবেশে দেখা দিতেন, তবে হয়ত তাহারা তাহাকে চিনিতেই পারিত না। অতি প্রাকৃতের চিরসংস্কারে অভ্যস্ত গোড়া বৈষ্ণবের কেহ কেহ করচার চৈতন্য মূৰ্ত্তিকে অপরিচিত মনে করিয়া অগ্রাহ করিয়াছেন। কিন্তু এখানে একটি কথা বিশেষ ভাবে বুঝিতে হইবে। চৈতন্ত চরিতামৃত প্রভূতি গ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধায় আমি কাহারও কাছে পিছু হটবনা। যাহারা বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম কি ইহা বুঝিতে চাহিবেন, তাহাদের পক্ষে চরিতামৃত অনন্তগতি। এই মহাগ্রন্থকে বাদ দিয়া যাহার। এদেশের বৈষ্ণবধৰ্ম্মের গুঢ় মৰ্ম্ম বুঝিতে চাহিবেন, তাহাদের প্রচেষ্টা ভেলা দিয়া সমুদ্র উত্তীর্ণ হইবার চেষ্টার মত বিফল হইবে। কবিরাজ গোস্বামীর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও ভক্তি এই গ্রন্থের সর্বত্র দেদীপ্যমান। জগতের অন্য কোথায়ও আর কোন সম্প্রদায়ের এরূপ দর্শনাত্মক ধৰ্ম্ম-গ্রন্থ আছে কি না জানি না। কিন্তু তাই বলিয়া ইতিহাস হিসাবে ইহার দাবীর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করিতে পারা যায় না। ভগবতী, গণেশ, বাসুদেব প্রভৃতি দেব-বিগ্রহের কাহারও দশভূজ, কাহারও গজমুণ্ড, কাহার ও চতুভূজ সকলেই প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। কিন্তু ভাস্কর বা চিত্রকরগণ যখন ইহঁাদের পার্শ্বচরগণের মূৰ্ত্তি নিৰ্ম্মান করেন, তাহারা তখন घ
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।