8e গোৰিমদ দাসের করচা ঝরঝর করি অশ্রু পড়ে অমুক্ষণ ॥ বড় বড় মহারাষ্ট্ৰী আসি দলে দলে। শুনিতে লাগিল নাম মিলিয়া সকলে ॥ পশ্চাত ভাগেতে মুঞি দেখি তাকাইয়া। শতশত কুলবধু আছে Mড়াইয়া। অসংখ্য বৈষ্ণব শৈব সন্ন্যাসী আসিয়া । হরিনাম শুনিতেছে নয়ন মুদিয়া ॥ ভক্তিভরে হরিনাম শুনিছে সকলে। নারীগণ অশ্রুজল মুছিছে আঁচলে।” ( ৫১ পৃ: ) এই অনশন-ক্লিষ্ট শীর্ণ-দেহ চৈতন্যদেব কি বহুভোজী দামোদর ও প্রলয়ঙ্কর নৃসিংহের অবতার হইতে মাধুর্য্যের হিসাবে আমাদের প্রিয়তর নহে ? করচ, চৈতন্যজীবনের একটি মুষ্টি ভিক্ষ হইতে পারে, কিন্তু তাহা সুবর্ণ মুষ্টি । বৈষ্ণব ভক্তগণ ছাড়া যাহারা মাঝে মাঝে মহাপ্রভুর সঙ্গে দেখা করিতেন, তাহদের নাম প্রসিদ্ধ বৈষ্ণব গ্রন্থগুলিতে বজ্জিত হইয়াছে ; কারণ পরবত্তীকালে বৈষ্ণব সমাজে সেই সকল লোকের নাম মনে রাখিবার মত কাহারও দরকার হয় নাই । গোবিন্দদাস সেই সকল উপলক্ষে উপস্থিত থাকায় তখন তখন তাহদের নাম টুকিয়া রাখিয়াছেন। চৈতন্যপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের সময় বৈষ্ণব ভক্তদের সঙ্গে সঙ্গে “পণ্ডিতের শিরোমণি চণ্ড চণ্ডেশ্বর", শম্ভুচন্দ্র, কাশীশ্বর ন্যায়রত্ন, সিদ্ধেশ্বর, রামরত্ন, পঞ্চানন বৈদাস্তিক প্রভৃতি কয়েকজন অজ্ঞাতনামা অথচ বড় পণ্ডিতের নাম পাওয়া যাইতেছে। । ১২ পৃ: ) দাক্ষিণাত্যে ভ্রমণের সময় তিনি যে সকল স্থানের নাম উল্লেখ করিয়াছেন, তাহ চক্ষে না দেখিয় অপর কিরূপে জানিতে পারিবে ? পূর্ণনগরের ( পুন: ) নাম অবগ মানচিত্রে পাওয়া যায়। কিন্তু তথায় যে আচ্ছ সরো বর’ আছে তাহ ত ম্যাপে নাই। অনুসন্ধানে জানিতে পারিয়াছি যে গোবিন্দ বর্ণিত আচ্ছ সরোবর’ এখনও তথায় আছে। খাণ্ডবা দেবতা যে আছেন, তাহাই বা কে জানিতে পারিত ? তথাকার সেবাদাসী হতভাগিনী মুরারিদের কথাই বা না দেপিয়া কে লিখিতে পারিত । অমুসন্ধানে জানা গিয়াছে যে সেবাদাসী মুরারিরা এখনও খাওবার মন্দিরে বাস করিতেছে । ভালপন্থ, নরোজী, ভৰ্গদেব, ভবভূতি শেঠ, আদি নারায়ণ, চুওঁীরাম, বালাজী, তা মহারাজ, মাধফুে-ভূজা, ডাকোরজী, রণছোড়জী প্রভৃতি অদ্ভুত অদ্ভূত নাম কি মাথা হইতে তৈয়ারী করা স্বাভাবিক ? যে সকল স্থান সম্বন্ধে ঐ সকল নামের উল্লেখ হইয়াছে তৎ তৎ স্থলে উক্ত প্রকারের নাম এখনও প্রচলিত। কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কথা যে করচায় আছে যাহা চোখের দেখা না হইলে লোকে লিখিতে পারে না—তাহার ইয়ৰ নাই—“দেখিলে সে ঝারি থও কঁপিয়ে শরীর। বহুদূর গিয়া পাই ক্ষুদ্র এক খাল। সেই পানে স্বান করে শরীর দুলাল।” (৭২ পৃঃ) একটা বস্ত ফলের প্রসঙ্গে “চেশিয়া সিঙ্গ সম যেই গাছ শোভে ৷ কামরাঙ্গ সম হয় ফলের গঠন।” (৭১ পৃঃ), কিষ্ণুকাঞ্চীতে “নিত্য দুইমণ ক্ষীরে পায়সার হয়,” (৩২ পৃ৯ ত্রিকাল ঈশ্বর প্রসঙ্গে “চারি হস্ত পরিমিত গৌরীপষ্ট তার” (৩২ পৃঃ) ভদ্রা নদীর তীরে “চাম্পিফল খাই যাহা পাই ভিক্ষা করি।” (৩২ পৃ: ) ত্রিপত্রিপুরের শিব মন্দিরে—“করিলে ববোম্ শব্দ তাহার মন্দিরে। প্রতিধ্বনি করি শব্দ দণ্ডকাল ফিরে ॥” (৩৭ পৃঃ)
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।