ভূমিকা Qシ বাধা পাইয়া তাহার জ্ঞান ফিরিয়া না আসিত, তবে নিশ্চয়ই ঐ রমণীকে তিনি আলিঙ্গন করিতেন, যেরূপ অজ্ঞানাবস্থায় তিনি তীর্থরামকে পদদলিত করিয়াছিলেন এবং সত্যবাইকে স্পর্শ করিয়াছিলেন। এ সম্বন্ধে অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি মহাশয় লিথিয়াছেন—“ঘদি সন্নিকটবৰ্ত্তী ভক্ত গোবিন্দ তখন তাহাকে ধরিয়া বারণ না করিতেন, তবে কি তইত ? তবে সত্যের বেলা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহাই হইত না কি ?” ( খ্ৰীশ্ৰীবিষ্ণুপ্রি”। গৌরাঙ্গ পত্রিকা, ৩য় বর্ষ, ৫ম সংখ্যা, ১৫৮ পূঃ ! সুতরাং চৈতন্ত চরিতামৃত, চৈতন্য চন্দ্রোদয় নাটক প্রভৃতি গ্রন্থের দ্বার প্রমাণিত হইতেছে যে (১) মহাপ্ৰভু সন্ন্যাসের পরেও স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলিতেন, (২) স্ত্রীলোক তাহাকে স্পর্শ করিলেও তিনি তাঙ্গ নিষেধ করিতেন না, (৩) তিনি সেবাদাসীদের অভিনয় শুধু দর্শন করিতেন না—উপভোগ করিতেন, (৪) অজ্ঞানাবস্থায় তিনি সেবাদাসীদিগের একজনকে আলিঙ্গন করিতেও ছুটিয়াছিলেন। সুতরাং ইহার পরে করচার প্রসঙ্গ লইয়া হৈ চৈ করিয়া লোকদিগকে উত্তেজিত করিবার চেষ্টা বৃথা পণ্ডশ্রম মাত্র। তিনি পতিতদিগকে উদ্ধার করিবার জন্ত অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। তাহাদিগকে প্রেমের বন্যায় ভাসাইয়া লইয়া যাইবার জন্ত স্বর্গ হইতে যে মন্দাকিনী ধারা প্রবাহিত হইয়াছিল, তাহাতে গণ্ডী স্থাপন করিতে যাওয়া ভুল। কেবল পুণ্যবান লোক দিগের বাড়ীতে বাড়ীতে ঘুরিবার জন্য তিনি জগতে অবতীর্ণ হন নাই। তদীয় প্রেমের অবাধ গতিতে স্ত্রী পুরুষ সকলেই ধর পড়িয়াছিল। উদার আকাশের স্থায় ছিল চৈতন্ত-প্রেম। তাছাতে সুকীর্ণত আরোপ করিয়া তাহাকে প্রেমের “এক চোখো” দেবতা তৈরী করিবার যে চেষ্ট, তাহা শিক্ষিত সম্প্রদায় গ্রাহ করিবেন না,—ইতিহাস তাহ মানিবে না । ভগবৎপ্রেম-বিশুদ্ধ তাহার চিন্ময় দেহের স্পর্শে পাপী-তাপী উদ্ধার পাইত—তহার সেই দেহে অপবিত্রতার লেশ কল্পনা করা— বাতুলতা মাত্র। আমরা মহাপ্রভূর সাৰ্ব্বজনীন প্রীতির প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা স্থাপন করিয়া গোবিন্দের এই কয়েকটি ছত্র আবুত্ত করিতেছি, ইহা চৈতন্তদেবের শ্ৰমুথের বাণী :– “চণ্ডাল যুবক-গৃহী বালবৃদ্ধ নারী। নামে মত্ত হইয়া দাড়াবে সারাসারি। বালক বলিবে হরি বালিকা বলিবে। পাষাও অঘোরপন্থী নামে মত্ত হবে । আকাশ ভেদিয়া নামের পতাকা উড়িবে। রাজা প্রজা এক সঙ্গে গড়াগড়ি দিবে।” প্রতিবাদীরা বলিয়৷ বেড়াইতেছেন, করচায় চৈতন্ত সহজিয়ারূপে বৰ্ণিত হইয়াছে। সহজিয়া কথাটা বাঙ্গাল সমাজে প্রায়ই ঘৃণিত অর্থে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। যাহারা স্ত্রীলোকের প্রেমকেই পরমার্থ লাভের একমাত্র উপায় মনে করেন, তাহারাই সহজিয়া’ । করচায় চৈতন্তদেব বহুস্থানে এই মতের প্রতিবাদ করিয়াছেন "প্রেম প্রেম করে লোকে প্রেম জানে কেবা। প্রেমের কি তত্ত্ব হয় রমণীর সেবা । অভেদ পুরুষ নারী যখন জানিবে। তখন প্রেমের তত্ত্ব হৃদয়ে ফুরিবে। • • • আত্মরামের জন্ত যার আৰ্ত্তি হয়। তার কি মনের মধ্যে কাম ভাব রয় ॥ আলোর নিয়ড়ে যথা তমো নাহি রয়।
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।