W28 - গোৱিন্দ দাসের করচা নিত্যানন্দ গৃহাশ্রম স্বীকার করিয়া শুধু সুবর্ণ বণিক উদ্ধরণ দত্তের হাতের ভাত থাইতেন না, হাড়ি, ডোম সকলের ঘরেই খাইতেন। (“হেন জাতি না খাইল যার ঘরে” চৈ, ভা, ২৪শ অ ) কায়স্থ-কুল শিরোমণি কালিদাস যখন ঝড় নামক ভূইমালীর উচ্ছিষ্ট আম্রফল ড্রেন হইতে তুলিয়া লইয়া তাহা চুষিয়া খাইয়া জাতি-ভেদের মস্তকে বজ্রাঘাত করিয়াছিলেন—তখন প্রেমের দেবতা চৈতন্য র্তাহার এই কাৰ্য্যের অমুমোদন করিয়া উৎসাহ দিয়াছিলেন। কালিদাস শুধু ঝড়ুর উছিষ্ট খান নাই, তাহার পদরজ অঙ্গে মাখিয়া জাতিভেদের অসারতা প্রমাণ করিয়াছিলেন। চৈতন্য এজন্ত তাহাকে সাধুবাদ দিয়াছিলেন । আজ যে গোস্বামীরা সৰ্ব্বজাতি নিৰ্ব্বিশেষে মন্ত্ৰ দিয়া সকলের ঘরে আহার করিতেছেন, তাহ সেই পতিত পাবন দীনদয়াল প্রভুর উদারতার ফলে। প্রকৃত বৈষ্ণবগণ শাক্ত কবির নিন্দাবাদকে পুষ্পচন্দন মনে করিতেন, “গৌর ব’লে আনন্দে মেতে । একত্রে ভোজন ছত্রিশ জেতে ॥ বাগদী হাড়ি ধোপা কলুতে একত্র সমস্ত।” এই আনন্দ-গঙ্গায় অবগাহন-পূণ্য বৈষ্ণবেরা পুনরায় নিজদিগকে জাত্যাভিমানের কুক্ষীগত করিতেছেন, ইহ বড়ই আক্ষেপের বিষয়। কীৰ্ত্তনীয়ারা গৰ্ব্ব করিয়া গাহিয়া থাকে “সব অবিধি ন’দের বিধি”— অন্যত্র যাহা অবিধি বা অশাস্ত্রীয় তাহাই “ন’দের বিধি”। চৈতন্যচরিতামুতে দেখা যায় যবন হরিদাসকে প্রভু ব্রাহ্মণের শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণ তুল্য আদর ও শ্রদ্ধা দিয়াছেন এবং তাহার মৃত্যুকালে সমবেত ব্রাহ্মণমণ্ডলীকে দিয়া সেই ভক্তপ্রবরের পাদোদক পান করাইয়াছিলেন। তিনি বজ্ৰগম্ভীর স্বরে ঘোষণা করিয়াছিলেন “মোর জাতি মোর সেবকের জাতি নাই” (চৈ,ভ, অস্ত্য ১১ ) চৈতন্তদেব সন্ন্যাসী পণ্ডিতদের গৰ্ব্ব নাশ করিবার জন্ত শূদ্র রাম রায়ের দ্বারা শাস্ত্র ব্যাখা করাইয়াছিলেন—“সন্ন্যাসী পণ্ডিত গণের করিতে গৰ্ব্ব নাশ। নীচ শূদ্র দ্বারা করে ধৰ্ম্মের প্রকাশ।” ( চৈ, চ অস্ত্য ৫।৩৪ ) আজ কাল বৈষ্ণব সমাজের সেই বিশ্বব্যাপী উদার নীতি সঙ্কীর্ণ হইয়া আসিতেছে। ঈশ্বর পুরী পুনঃ পুনঃ নিজকে “শূদ্ৰাধম” বলিয়াছেন। এখন কার চৈতন্য ভাগবতের কোন কোন সংস্করণে “শূদ্ৰাধম” পাঠের স্থলে “ক্ষুদ্রাধম” লিখিত দেখিতে পাইতেছি । সম্পাদকগণের কাহারও কাহারও পাণ্ডিত্য সম্বন্ধে আমার কোন ংশয় নাই। র্তাহার যে অনেক প্রাচীন পুথি দেখিয়া চৈতন্ত ভাগবত সম্পাদন করিয়াছেন, তাহা তাহারা নিজেরাই লিখিয়াছেন। তাহারা পাদোটীকার অন্তান্ত স্থলে পাঠান্তর দিয়াছেন কিন্তু “ক্ষুদ্রাধম” যদি বা কোন পুথিতে ছিল, তাহা লিখিয়া অন্য কোন পাঠাস্তরের উল্লেখ করেন নাই। চৈতন্ত ভাগবতের বহু প্রাচীন পুথি আমরা দেখিয়াছি এবং তাছাদের ' সৰ্ব্বত্রই “শূদ্ৰাধম পাঠ আমরা পাইঃাছি। এ সম্বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন পুথি বিভাগের ভার প্রাপ্ত শ্ৰীযুক্ত বসন্ত কুমার চট্টোপাধ্যায় এম. এ. মহাশয় আমদ** লিখিয়াছেন -“কলিকাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুথি শালায় রক্ষিত বৃন্দাবন-দাসকৃত তg. ভাগবতের পুথি সমুহের অনেক গুলি পাঠ করিয়া দেখিলাম। এই গ্রন্থে ঈশ্বর পুরী মার্মিশূদ্ৰাধম” বলিয়। আত্মপরিচয় দিয়াছেন। ৪৮১ নং পুথির ৭২ পৃষ্ঠায় ৪৮২ নং পুথির
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৬৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।