ভূমিকা - - W50: ৩৬ পৃষ্ঠায়, ৪৭৩ নং পুথির ৫০ পৃষ্ঠায় এবং ৪৭২ নং পুথির ৬৬ পৃষ্ঠায় স্পষ্টাক্ষরে এই কথা লিখিত আছে।” মহাভক্ত ঈশ্বরপুরীর নিকট চৈতন্যদেব “দশাক্ষর” মন্ত্র গ্রহণ করিয়াছিলেন, এবং তাহাকে সৰ্ব্ব তীর্থ অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ ও পুণ্য তীর্থ বলিয়া কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। এ হেন ব্যক্তি ব্রাহ্মণেতর জাতি হইলে সে যে সমাজ বিরোধী কথা হয় ! চৈতন্যদেব ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, কিন্তু কোন কুল তাহাকে চিহ্নিত করিতে পারে নাই। তিনি ছিলেন সৰ্ব্বকুলের বিশ্বপ্রেমিক কুলদেবতা। সৰ্ব্ব বর্ণের সঙ্গে তাহার বৈষম্য দূর করিবার জন্য তিনি শিখাস্বত্র ত্যাগ করিয়াছিলেন। তিনি কৃষ্ণ-ভক্ত ছিলেন, কিন্তু বৈষ্ণব বলিতে এখন আমরা যাহা বুঝি তিনি তাহা ছিলেন না। তিনি দর্পণ সম্মুখে রাখিয়া মাপ জোক দিয়া তিলক কাটেন নাই কিংবা কোনরূপ অঙ্গরাগ করেন নাই । চৈতন্তচন্দ্রোদয় নাটকে কবিকর্ণপুর লিখিয়াছেন “স্নানং নো তুলসী নিষেবন বিধি নো চক্রসনাশনং নে নাম গ্রহণঞ্চ নো নতি ততি নো” ( দশমাঙ্ক ) । তিনি নিয়মের গওঁীতে পা দিয়া কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হন নাই। বনুধা তাহার কুটম্ব ছিল । কুটম্ব হিসাবে বৈষ্ণব তাহার পর ছিল না, কিন্তু বৈষ্ণব সমাজ তাহাকে এক মাত্র তাহদের বলিয়া ঘোষণা করিবেন, এরূপ সুবিধা তিনি দেন নাই। শৈব, শাক্ত ও অপরাপর ধৰ্ম্মমত র্তাহার রাজকীয় প্রেমপথের পরিপন্থী ছিল না। এই জন্য তিনি কখনও ‘হর’ কখনও ভবানী’ নাম গ্রহণ করিয়া তাহার আরাধ্যকে প্রণতি জানাইতে দ্বিধা বোধ করেন নাই। বর্ণাশ্রমের প্রচারকদের এই মহা সন্ন্যাসীর অপরিহার্য্য সঙ্গী স্বরূপ একজন পাচক ব্রাহ্মণ জুড়িয়া দেওয়ার আগ্রহাতিশয় দেখিয়া হাসি পায় । হরিচরণ তাহার অদ্বৈত মঙ্গলে মহাপ্ৰভু সম্বন্ধে লিখিয়াছেন “বর্ণাশ্রম চণ্ডালাদি একত্র করিলা ।” চৈতন্য দেবের জটা দেববিগ্রহ নিৰ্ম্মাণ করিতে গেলে আধুনিক যুগে দাড়ি দেওয়ার রীতি নাই। অদ্বৈতচার্য্যের দাড়ি ছিল ( “দাড়ি পড়িয়াছে তার হৃদয় ছাইয়া” ) ইহা শুনিয়া খড়দহের এক গোস্বামী অত্যন্ত বিচলিত হইয়া পড়িয়াছিলেন, কারণ শাস্তিপুরে অদ্বৈত বিগ্রহে দাড়ি নাই। যাহারা দেবতা, তাহাদের কৈশোর-মুৰ্ত্তি কল্পনা করাই এদেশের আধুনিক রীতি। কিন্তু অদ্বৈতাচার্য্যের যে দাড়ি ছিল তাহ শুধু করচায় নহে, অনেক প্রাচীন পদেও পাওয়া যায়। গৌরপদ তরঙ্গিণীতে র্তাহার আবক্ষ বিস্তৃত লোমাবলীর উল্লেখ আছে । *** বলীয় সাহিত্যপরিচয় ১ম খণ্ডের ৭৫৭ পৃষ্ঠায় প্রদত্ত চিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ ಇಡ್ಲಿ এদিকে চৈতন্ত এবং নিত্যানদের দাড়ি গোফ বিরহিত কৈশোর মূৰ্ত্তির সঙ্গে যাবার পরিচিত, তাহারা যদি প্রাচীন চিত্রগুলি দেখিতেন তবে নিশ্চয়ই কতকটা বিস্মিত হইতেন। একখানি প্রাচীন পটে নিত্যানন্দ প্রভুর খুব প্রকাণ্ড দাড়ি দেওয়া আছে। 3
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।