ভূমিকা \»ግ মহাপ্ৰভু অনন্তদেব হইয়াছিলেন এবং অদ্বৈতপ্রভু দেখিয়াছিলেন “সপ্ত ফণাধর মহা নাগগণ। উৰ্দ্ধবাহু স্তুতি করে তুলি সব ফণ" কিংবা তিনি সিংহরূপ ধারণ করিয়া কাজীর বক্ষে নখাঘাত করিতেছেন, এ সকল অলৌকিক কথা ছাড়িয়া দিলেও চরিতামুতাদি গ্রন্থে যে কথাগুলি অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিকরূপ বর্ণিত আছে তাহারও সমস্তটা সময়ে সময়ে বিশ্বাস করা যায় না । চরিতামৃতকার চৈতন্ত প্রভূর দেহ বর্ণনার উপলক্ষে লিখিয়াছেন যে তাহার নিজ বিরাট হস্তের মাপে তাহার দেহ দৈর্ঘ্য ও বিস্তারে চারি হস্ত পরিমিত ছিল (চৈ, চ আদি ৩৩১, ৫৷৯৬) ইহাতে তাহার দেহ দৈর্ঘ্যে প্রায় ৯ ফিট হইয়া পড়ে। কলিকাতার গৃহস্থদের বাড়ীর অধিকাংশ দরজাগুলি ৬৭ কিংবা জোড় ৭২ ফিট উচ্চ। এমতাবস্থায় যদি তাহাকে এই সকল বাড়ীর কোন ঘরে ঢুকিতে হইত, তবে হামাগুড়ি দিতে হইত। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে যাহারা ‘শিয়ালের জায়গায় শৃগালী’ হইল কিনা, এবং প্রভু কৃত্রিম জটা ধারণ করিলেন কিনা এই সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের ঐতিহ্য লইয়া মহাহট্টগোল করিতেছেন , তাহারা চৈতন্যচরিতামৃতের সকল কথা মানিয়া লইলে প্রভুর যে গৃহ-প্রবেশ পৰ্য্যন্ত অসম্ভব হইয়া পড়ে, এম্বন্ধে একটুকু আলোচনা করিলেন না। করচার সঙ্গে চরিতাস্বতের কোন জায়গায় গরমিল হইলে যাহারা অসহিষ্ণু হইয়া উঠেন, তাহারা চৈতন্ত চরিতামৃতের সঙ্গে চৈতন্যভাগবত, চৈতন্যচন্দ্রোদয় ও চৈতন্যমঙ্গলের যে কত স্থানে অনৈক্য আছে তাহা একবারও লক্ষ্য করেন না। চৈতন্য ভাগবতে আছে সন্ন্যাস গ্রহণের পূৰ্ব্বরাত্রে মহাপ্ৰভু বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গে ছিলেন না । “নিকটে শুইলা হরিদাস গদাধর”—চৈঃ ভাঃ মধ্য ২৬ প: ) কিন্তু এই উপলক্ষে লোচনদাস মহাপ্রভুর সঙ্গে বিষ্ণুপ্রিয়ার রাত্রিবাসের যে বর্ণনা দিয়াছেন তাহার রুচি প্রায় ভারতচন্দ্রর কাছাকাছি যায় (অবত ‘লীলা বলিলে কাহারও কিছু বলিবার থাকে না )—“ক্ষেণে ভুঞ্জলতা বেড়ি আলিঙ্গন করে। নব কমলিনী যেন করিবর কোলে ॥ * * নানারস বিহারয়ে বিনোদ নাগর। আছুক অন্তের কাজ কাম অগোচর ॥ * * হৃদয় উপরে খোয় না শোয়ায় শয্যা। পাশ উলটিতে নাহি দোহে এক মজ্জা। বুকে বুকে মুখে মুখে রজনী গোঙায়। রস অবশেষে দোহে মুখে নিদ্রা যায়।” ( লোচন চৈ, ম, মধ্য খণ্ড ) চৈতন্ত মঙ্গলে উল্লিখিত আছে সন্ন্যাস গ্রহণের চারিদিন পরে শচীদেবীর সঙ্গে চৈতন্থের শাস্তিপুর অদ্বৈত গৃহে দেখা হয়, কিন্তু চৈতন্য ভাগবতে পাই যে সন্ন্যাসের পর বার দিন পরশু শচীদেবী অনাহারে নবদ্বীপে পড়িয়া ছিলেন, তৎপর নিত্যানন্দ ফিরিয়া আসিয়া উহাকে সৰ্ব্ব প্রথম চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের কথা অবগত করান। চৈতন্যমঙ্গলে লিখিত আছে সন্ন্যাসের পরে মহাপ্ৰভু পুনরায় নবদ্বীপে গিয়াছিলেন ("মায়ের বচনে পুন গেল নবদ্বীপ। করুণা বাড়িল নিজ বাড়ীর সমীপ।” )। এ কথার সঙ্গে অন্তান্ত চরিতাখ্যানের ঐক্য নাই। চৈতন্য ভাগবতে প্রভুর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণের উল্লেখ অথবা সঙ্গী কৃষ্ণদাসের নাম নাই, এবং কবিকর্ণপুর যিনি খাস পুরীতে বসিয়া (যথা হইতে মহাপ্রভু দাক্ষিণাত্য ভ্রমণে বহির্গত হন), তাহার অন্তঃৰ্দ্ধানের কিছু পরে লিখিয়াছিলেন যে মহাপ্রভুর সঙ্গে গোদাবরীর তীর অতিক্রম
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৭২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।