ভূমিকা ዓ› সম্মত যে দীনেশ বাবুর বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে বৈষ্ণব প্রসঙ্গ অনেকটা স্থান জুড়িয়া আছে। তৎপর তিনি “চৈতন্য এবং তাহার সঙ্গিগণ”, “মধ্য যুগের বৈষ্ণব সাহিত্য” “বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়” প্রভৃতি পুস্তকে পুনরায় বৈষ্ণব প্রসঙ্গের অবতারণা করিাছেন। গ্রন্থকার যদিও স্বয়ং বৈষ্ণব নহেন, তথাপি তিনি বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম ও সাহিত্য সম্বন্ধে প্রগাঢ় রূপ অনুরাগ-পরায়ণ এবং এই বিষষে লিখিতে যাইয়া প্রচুর সহানুভূতি ও উচ্ছাসিত কবিত্ব শক্তি দেখাইয়াছেন। কিন্তু তাহার স্বাভাবিক ঐতিহাসিক বুদ্ধি তাহার লেখনীকে সৰ্ব্বদা সংযত রাখিয়াছে। মিঃ সেনের পুস্তক গুলি পাইয়া আমরা চৈতন্য যুগের বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের এরূপ সমৃদ্ধ উপকরণ পাইয়াছি, যাহা তৎপূৰ্ব্বে অনধিগম্য ছিল।” ডাঃ সিলভান লেভি আমার “চৈতন্য এবং তদীয় যুগের ইতিহাস” পুস্তকের ভূমিকায় এই অযোগ্য লেখকের নানারূপ প্রসংসা করিয়াও চৈতন্তের প্রতি অনুরাগের জন্তু আমাকে “ধৰ্ম্মোন্মাদ” (Fanatic) আখ্যা প্রদান করিয়াছেন এবং অতি বৃদ্ধ ঐতিহাসিক বেভারিজ সাহেব “রয়েল এসিয়াটিক সোসাইটির জারন্যালে” আমার ইংরেজীতে লিখিত বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাসের সম্বন্ধে অনেক ভাল কথা বলিয়া চৈতন্তের প্রতি অনুরাগের জন্য আমার প্রতি বিদ্রপোক্তি বর্ষন করিয়াছেন। এদিকে খাস বাঙ্গলা দেশে আমি বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম মাটি করিয়াছি, এই রব উঠিয়াছে ! গোবিন্দ কৰ্ম্মকারের বিস্তৃত পরিচয় আমরা করচা হইতে জানিতে পারিয়াছি উত্তর রাঢ়ের অন্তর্গত কাঞ্চন নগরে (বৰ্দ্ধমান) গোবিন্দ কৰ্ম্মকার জন্ম গ্রহণ করেন । র্তাহার পিতার নাম শুমা দাস কৰ্ম্মকার এবং মাতার নাম মাধবী। তাহার স্ত্রী শশিমুখী একদিন তাহাকে ‘নিগুৰ্ণ’ ও ‘মুখ’ বলিয়া গালাগালি দেয়। ( ১ পৃ: ) । তিনি সেই অপমানে ১৫০৮ খৃষ্টাব্দে ( ১৪৩০ শক) গৃহত্যাগী হন। এই সময়ে চৈতন্তদেব ভগবানের অবতার বলিয়া প্রসিদ্ধি লাভ করিতেছিলেন। গোবিন্দ কৰ্ম্মকার কাটোয়ায় যাইয়া এই কথা শুনিতে পাইয়া নবদ্বীপাভিমুখে রওনা হন। নৰদ্বীপে তিনি চৈতন্যদেবকে সহচর মণ্ডলী পরিবৃত হইয়া জলে অবগাহন করিতে দেখিতে পান। একজন জেলে তাহাকে সেই সকল সহচরদের পরিচয় দিয়া দেয়। প্রভুকে দেখা মাত্র গোবিন্দ তাহার পাদপদ্মে নিজের হৃদয় বিকাইয়া ফেলিলেন , তিনি চৈতন্তের মূৰ্ত্তি দেখা মাত্র মুগ্ধ হইলেন,—“কটিতে গামছা বাধা অপূৰ্ব্ব দর্শন। সঙ্গে এক অবধূত প্রসন্ন বদন। ৫ * ঘাটে বসি এই লীলা হেরিস্থ নয়নে। কি জানি কেমন ভাব উপজিল মনে ॥ কদম্ব কুসুম সম অঙ্গে কাটা দিল । থরথরি সব অঙ্গ কঁাপিতে লিেগল। ঘামিয়া উঠিল অঙ্গ তিতিল বসন। ইচ্ছা অশ্রু জলে মুই পাখালি চরণ।” ( ৩ পু: ) ১৫০৮ খৃষ্টাব্দ হইতে সম্ভবতঃ চৈতন্য প্রভূর তিরোধান পৰ্য্যন্ত গোবিন্দ তাহার অনুগামী ছিলেন। যখন চৈতন্তদেব সন্ন্যাস গ্রহণ করিতে সঙ্কল্প করিয়া বৰ্দ্ধমানের পথে কাটোয়ায় যাত্রা
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।