Գ8 - গোন্দিদাসের করচা পুরীতেই মহাপ্রভুর বিবরণে জানা যায় তাহার লীলাবসান পৰ্য্যন্ত গোবিন তাহার পরিচর্য্যায় রত ছিলেন। আমাদের অনুমান যদি ঠিক হয় তবে ১৫০৮ হইতে ১৫৩৩ খৃষ্টাদ পৰ্য্যন্ত এই ২৫ বৎসর গোবিন্দ মহাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিয়াছিলেন। এই দীর্ঘকালের সঙ্গী, যাহাকে বৈষ্ণবেরা শ্ৰীগোবিন্দ নামে অভিহিত করিয়া সম্মান দেখাইয়াছেন, তাহার বাড়ী কোথায়,—তিনি বঙ্গদেশী একথা ঠিক,–কিন্তু তাহার আর কোন পরিচয়ই কেহ দেন নাই, ইহা ও বড় আশ্চর্য্যের কথা । অপরাপর সঙ্গিগণেরও ত সকলের পরিচয়ই বৈষ্ণব গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যায়। এতবড় ভক্ত অনুচর—বিশেষ বাঙ্গালী প্রেমিকের কোন—ঠিকানা বৈষ্ণব সাহিত্যে নাই। একথা দ্বারা কি ইহা অনুমিত হয় না যে, যে গোবিন্দ স্বীয় করচ, অতি সঙ্গোপনে” (৬২ পৃঃ) রাখিয়াছিলেন, যিনি কাঞ্চন নগরের মায়া পাশ ছিন্ন করিয়া মহাগ্রভুর পদসেবার অধিকারী হওয়া অপেক্ষা আর কোন উচ্চ উদ্দেপ্ত পোষণ করেন নাই—এবং যিনি, চৈতন্যচন্দ্রোদয় কৌমুদী সম্বন্ধে আমাদের মত ঠিক হইলে, কাঞ্চননগরের নাম লুকাইয়া “উত্তররাঢ়বাসী বৈদেশিক” বলিয়া নিজকে পরিচিত করিয়া ছিলেন,—সেই গোবিন্দের এই ছদ্মবেশ ইচ্ছাকৃত, তিনি করচার ন্যায় নিজের পরিচয় ও সম্পূর্ণরূপে সঙ্গোপন করিয়াছিলেন। ঐগোবিন্দের পরিচর্য্যা ও গোবিন্দ দাসের দাক্ষিণাত্যের মহাপ্রভুর পরিচর্য্যা এই দুই পরিচর্য্যার ভাব মিলাইয়া পড়ুন, তাহা হইলে দুই যে এক ব্যক্তি সে বিশ্বাস দূরীভূত হইবে। আহাৰ্য্য বস্তুর সন্ধান রাখা করচার গোবিন্দদাসের একটা প্রধান প্রচেষ্টার বিষয় । পুরীতে শ্ৰীগোবিনেরও তাহাই । চৈতন্ত চরিতামৃতের মধ্য ১৪ পঃ, ২০,—মধ্য ১২ পঃ ১০১,—মধ্য ১২ পঃ ৮৫,—অস্ত্য ৭পঃ, ৬৫,—অস্ত্য ১০ পঃ, ৩০-৩৩,—এই সকল শ্লোকের সঙ্গে করচার “পাইব v * মোচার ঘণ্ট দিয়া।” ( ৪ পৃঃ, ) “কত ফলমূল * * মুরস।” ( ৪ পু: ), “শাক স্থপ......... হইল” ( ১৪ পু: ), “ভোগ দিয়া......... বয়ান” ( ১৪ পু: ), “প্রসাদ—"নিস্বমুক্ত......... রাজা” ( ১৫ পৃ: ),—“চিনাচুর খুরমার লাড়ু... .....বাকৃ” (২• পৃ: ) প্রভৃতি পদ মিলাইয়া পড়ুন। করচায় কোন কোন বৃত্তাস্তবাদ পড়িয়াছে। এই এক অভিযোগ । সে সময়ে বিজয়নগরের সঙ্গে মুসলমানদিগের সর্বদা যুদ্ধবিগ্রহ হওয়ার দরুণ পথঘাট নিরাপদ ছিল না। এইজন্ত হয়তঃ সকল তীর্থেই ইহারা যাইতে পারেন নাই, তদ্বারা ইহা প্রমাণিত হয় না, যে করচায় ভুল রহিয়া গিয়াছে, সুতরাং উহা অপ্রামাণ্য । প্রায়ই প্রাচীন পুথিতে লিপিকারের প্রমাদ ঘটিয়া থাকে, তাহা ছাড়া পাঠ উদ্ধার করাও অনেক সময়ে সুকঠিন। বিশেষ, নাম-শব্দের প্রায়শই অনেক বিড়ম্বনা হয়। সাহিত্য পরিষৎ হইতে প্রকাশিত মাণিক গাঙ্গুলীর ধৰ্ম্মমঙ্গলের শেষ পৃষ্ঠায় “সাফেরিও” রূপ অদ্ভুত শব্দটি আছে। এই শব্দটির অর্থ করিতে যাইয়া একদা কয়েকটি বড় বড় মাথা ৰামিয়া গিয়াছিল। তখন এই ভূমিক-লেখক তাহার একটা অর্থ করিয়া সনোেহ ভঞ্জন করিতে পারিয়াছিলেন। সাফেরিও আর কিছুই নহে,—উহা “শাকে ঋতু’ শব্দের বিকৃতি এবং লিপিকরের একটি
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।