ভূমিকা ዓ® হাস্তাস্পদ প্রমাদ। ভৌগোলিক শব্দ, নামবাচক শব্দ প্রভৃতি সম্বন্ধে অনুমান চলে না, সুতরাং তাহাতে লিপিগ্ৰমাদ বেশী হইয়া থাকে, সুতরাং যদি কোন ভুল বাহির হয় তাহার সকলগুলিই গ্রন্থকারের কাধে চাপাইয়া দেওয়া ঠিক নহে। স্বৰ্গীয় জয়গোপাল গোস্বামী মহাশয় অনেক স্থানে পাঠোদ্ধার করিতে না পারিয়া নিজে শব্দ যোজনা করিয়াছেন, কোন কোন জায়গায় কীটদষ্ট ছত্রটি বুঝিতে না পারিয়া সেই ছত্র নিজে পূরণ করিয়া দিয়াছেন, একথা তিনি নিজে আমাকে বলিয়াছিলেন এবং তাহার জ্যেষ্ঠপুত্র বনোয়ারীলাল গোস্বামী ও মধ্যমপুত্র মোহনলাল গোস্বামী মহাশয় স্বয়ও জানাইয়াছেন। করচা প্রকাশ করার সময় বনোয়ারীলাল গোস্বামী মহাশয় ৪০ বৎসর বয়স্ক ছিলেন এবং তিনি তাহার পিতার সহায়তা করিয়াছিলেন। যে সকল স্থানে মরূপ পরিবর্তন ঘটিয়াছিল, তাহা তাহার যতটা মনে আছে ততটা তিনি নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন, তাহ পূৰ্ব্বেই লিখিত হইয়াছে; তদনুসারে বর্তমান সংস্করণ মুদ্রিত ও প্রকাশিত হইল। পূৰ্ব্বেই উক্ত হইয়াছে এইরূপ পরিবর্তন সেকালের সমস্ত পুস্তকেই হইয়াছে। রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডী ও পদকল্পতরু প্রভৃতি পুস্তকে এইরূপ পরিবর্তনের অবধি নাই চরিতামৃত বৈষ্ণবদিগের প্রধান ধৰ্ম্মগ্রন্থ। ইহার পাঠ খুব সতর্কতার সহিত রক্ষিত হইয়াছে। এজন্য ইহাতে পরিবর্তন কম দেখা যায়। তাহা সত্বেও পাঠান্তর বিস্তর আছে। সেকালের সমস্ত পুস্তকেই যখন নুনাধিক পরিবর্তন ঘটিয়াছে, তপন সেই পাপে কেবল করচাকেই বা কেন অপরাধী করা যাইবে ? যাহার হস্তলিপিত পুথির কোন খবর রাখেন, তাহারা জানেন একই গ্রন্থের ১০০ শত বৎসরের প্রাচীন পুথি ও ২০০ শত বৎসরের প্রাচীন পুথির মধ্যে বিস্তর পাঠান্তর ও বর্ণনা-বৈষম্য আছে। সৰ্ব্বশেষে আমার একটি নিবেদন এই ভূমিকায় বাধ্য হইয়া চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্যচন্দ্রোদয় প্রভৃতি মহাগ্রন্থগুলিকে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধির বিচারাধীন করিতে হইয়াছে। ইতিহাসের তুলাদণ্ডে ধরিলে পূৰ্ব্বোক্ত পুস্তকগুলির বিবরণ সৰ্ব্বত্র শ্রদ্ধেয় নহে। এই পুস্তকগুলি দেবলীলা বর্ণনায় ভরপুর। ইহাতে নরলীলার কথার প্রতি ততদূর বোক নাই। চৈতন্তদেবকে শ্ৰীকৃষ্ণ প্রতিপন্ন করাই ইহাদের মুখ্য উদেশ্ব। এই জন্ত লৌকিক ইতিহাস হিসাবে আমি ইহাদের মূল্য দিতে কুষ্ঠিত হইয়াছি। কিন্তু চৈতন্যচরিতামৃত ও চৈতন্তভাগবত বঙ্গভাষার অতি গৌরবের জিনিষ। এই দুই মহাগ্রন্থ ষোড়শ শতাব্দীর বঙ্গসাহিত্যের দুইটি কীৰ্ত্তিস্তম্ভ। ইহারা বহুগুণান্বিত। যেমন নিবিড় জঙ্গল, শুষ্ক পত্র ও ভগ্ন প্রস্তর সম্বলিত হইয়াও কোন গিরিশৃঙ্গ স্বীয় আকাশম্পর্শী মহিমা বিস্তার করিয়া থাকে, এই দুই মহাগ্রন্থও কতকগুলি ঐতিহাসিক ক্রট সত্বেও তেমনি বঙ্গদেশের জাতীয় ধৰ্ম্মবিজ্ঞানের মহিমা আলোকে উজ্জল হইয়া আছে। স্বৰ্গীয় হারাধন দত্ত ভক্তিনিধি মহাশয় চৈতন্যচরিতামৃত সম্বন্ধে লিখিয়াছিলেন “যেদিন এই মহাগ্রন্থ পাঠ মা করি, সেই দিনই বিপদ।” অনেক বৈষ্ণবের হৃদয়ই এই কথায় সাড়া দিবে।
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।