૧૭ গোবিন্দ দাসের করচা এই দুই গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্যও সামান্ত নহে। স্বতরাং আমার লেখায় যদি ইহঁদের সম্বন্ধে কোন আলোচনা থাকে, তবে ঐতিহ্য সম্বন্ধে বিচার করিবার জন্ত তাহা আমাকে বাধ্য হইয়া করিতে হইয়াছে,—ভক্ত-হৃদয়ে আঘাত দেওয়ার জন্য নহে। যদি অনবধান বশতঃ সেরূপ করিয়া থাকি, তাহাদিগের নিকট মার্জন ভিক্ষা করিতেছি । কিন্তু র্যাহার গোবিন্দ দাসের দ্যায় মহাভক্তের প্রতি কথায় কথায় বিদ্রুপের বাণ নিক্ষেপ করিতেছেন, তাহাদের কি কোন অনুতাপের কারণ নাই ? বৈষ্ণবের নিকট বৈষ্ণব-নিন্দার অপরাধ অতি গুরুতর। এ সম্বন্ধে গোড়া বৈষ্ণব অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি মহাশয়ের নিরপেক্ষ মন্তব্যটি উল্লেখ করিব। গোবিন্দ দাসের নিনাকারী বৈষ্ণব ভক্তকে উল্লেখ করিয়া তিনি বিনয় সহকারে বলিতেছেন, “এরূপ করা একজন ভক্তের পক্ষে অতি সাহসের কাজ কিনা তাহাতে পার্শ্বদ ভক্তকে অগ্রাহ করা হইতেছে কিনা—সে কথা বিবেচ্য।” করচায় দেখা যায় গোবিন্দদাস প্রভুর অজ্ঞানাবস্থায় যথোচিত সতর্কত অবলম্বন করিয়া র্তাহাকে রক্ষা করিতেন। তিনি জানিতেন, লোক শিক্ষার জন্ত সজ্ঞানে মহাপ্ৰভু স্ত্রীলোকদের সংসর্গ হইতে বিশেষ ভাবে আত্মরক্ষা করিতেন। কিন্তু মুরারিদের কাছে যাইয়া যদি হরিনামের মাদকতা আসিয়া প্রভুর জ্ঞান হরণ করিয়া লইয়া যায়, তিনি মহাপ্রভুকে সেই আশঙ্কায় তথায় যাইতে নিষেধ করিয়াছিলেন “মুহি বলি সে স্থানেতে গিয়া কাজ নাই। না শুনিল মোর কথা চৈতন্ত গোসাই ॥” ( ৫৫ পৃঃ ) চৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, দেবদাসীর মুখে জয়দেবের গান শুনিয়া যখন প্রভু উন্মত্তাবস্থায় তাহাকে আলিঙ্গন দিতে ছুটয়াছিলেন, তখন এই সতর্ক ভূত্যটি তাহাকে রক্ষা করিয়াছিলেন ( অস্ত্য २७ *३, २७ ) । নানা দিক দিয়া করচার গোবিন্দদাস এবং পুরীর সুবিখ্যাত অনুচর শ্ৰীগোবিন্দকে এক ব্যক্তি বলিয়া বোধ হয়। র্তাহীদের উভয়ের সেবাবৃত্তি এক ঝাজের, তাহারা উভয়ই শূদ্র । করচার গোবিন্দ প্রভুকে ছাড়িয়া বৈকুণ্ঠে যাইয়াও মুখী হইতে পারিতেন না। তিনি দাক্ষিণাত ভ্রমণের পর বাচিয়া থাকিলে নিশ্চয়ই চৈতন্তদেবকে ছাড়িয়া আর কোথাও যান নাই। দাক্ষিণাত্য হইতে প্রত্যাগমনের পর চৈতন্যদেব তাহাকে শাস্তিপুর পাঠাইয়াছিলেন। এই অল্প সময়ের বিরহে গোবিন্দ কাদিয়া বিহবল হইয়াছিলেন। চৈতন্যচন্দ্রোদয়কৌমুদী পাঠে স্পষ্টই প্রতীত হয়, গোবিন্দ প্রখণ্ড ও শান্তিপুর ঘুরিয়া শিবানন্দ সেনের দলে প্রবেশপুৰ্ব্বক পুরীতে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। তারপর কবিকর্ণপুর ও কৃষ্ণদাস কবিরাজ হঠাৎ জানাইলেন, ঈশ্বর পুরীর ভূত্য বলিয়া পরিচয় দিয়া এক শূদ্র গোবিন্দ প্রভূর নিকটে আসিয়া তাহার জীবনাবধি অন্তরঙ্গ সহচর হইয়া রহিলেন। যদিও ২৫ বৎসর কাল গোবিন্দ তাহার সেবা করিয়াছিলেন, তথাপি তাহার বাড়ী ঘর প্রভূতির কোন বিধয়ের ঠিকানা কোন বৈষ্ণব লেখকই দেন নাই ( অবশু বহু পুস্তকে তাহার প্রতি সশ্রদ্ধ উল্লেখ আছে )। এদিকে দেখিতে পাই, করচার গোবিন্দদাসের আত্মগোপন করিবার বিশেষ
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।