ভূমিকা 이어 প্রয়োজন ছিল, তাহ না করিলে খুব সম্ভব তাহাকে পুরীতে মহাপ্রভূর সাহচর্য হইতে কাঞ্চননগরে শশিমুখীর সঙ্গ লইয়া “পচা-গৃহস্থ সাজিতে বাধ্য হইতে হইত। করচাতেও তাহার আত্মগোপনের ইঙ্গিত আছে। গোবিন্দ দাস পেটুক বলিয়া নিজের পরিচয় দিয়াছিলেন, ইঙ্গ তাহার বৈষ্ণবোচিত সারল্য ও দৈন্তমাত্র। তবে খাদ্যদ্রব্যাদি সংগ্রহ ও সঞ্চয়ের ভার যে তিনি লইয়া ছিলেন, তাহ করচ ও চরিতামৃত উভয় গ্রন্থেই স্পষ্টতঃ দেখা যায় ; এবং এই দুই গ্রন্থেই এ সম্বন্ধে বিবরণ গুলির মধ্যে আশ্চর্য রকমের ঐক্য আছে। তাহার সেবাবৃত্তি ও মহাপ্রভুর প্রতি আন্তরিকতাও এক রকমের। উভয় গ্রন্থ পাঠে স্পষ্টই ধারণা হয়- যে গোবিন্দ দাক্ষিণাত্যে ছায়ার ন্যায় তাহার অনুগামী হইয়া খাদ্য সংগ্ৰহ করিতেন, সেই গোবিন্দই পুরী মন্দিরেও র্তাহার ছায়ার ন্যায় অনুগামী এবং খাদ্যসামগ্রীর ভাড়ার আগলাইতেন। যে গোবিন্দ মুরারিদের পল্লীতে যাইতে তাহাকে বারণ করিয়াছিলেন, সেই গোবিন্দই পুরীতে সেবাদাসীর স্পর্শ হইতে র্তাহাকে রক্ষা করিয়াছিলেন। সুতরাং আমাদের দৃঢ় ধারণা যে এই দুই ব্যক্তিই এক। তাহ না হইলে তাহার এতাদৃশ অন্তরঙ্গ ভূত্য দাক্ষিণাত্য হইতে ফিরিয়া আসিয়া একবারে তাহার সঙ্গবিচ্যুত হইয়া গা ঢাকা দিলেন, একথা বিশ্বাসযোগ্য নহে। অথচ ঠিক সেই ব্রাহ্ম মুহূৰ্ত্তে, যখন তাহার আত্মগোপন করিবার বিশেষ প্রয়োজন হইয়ছিল, তখনই গোবিন্দ নামক এক শূদ্র ঈশ্বরপুরীর ভূত্য এই পরিচয় দিয়া সহসা প্রভুর নিতান্ত অন্তরঙ্গ হইয়া পড়িলেন,—এই রহস্তটি ভাল করিয়া পর্যালোচনা করিলে দুই ব্যক্তির একত্ব স্পষ্টরূপে ধরা পড়িবে। গোবিন্দ নিজের অপরিসীম দৈন্য ও সারল্যে নিজকে “পেটুকের শিরোমণি” বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন, স্বয়ং মহাপ্রভু নিজকে “অধম” ও “অস্পৃশ্ব” বলিয়া কত স্থানে বর্ণনা করিয়াছেন । “প্ৰভু কহে ভিক্ষা করি গৃহস্থের দ্বারে। নিতান্ত অস্পৃশু মুই ছুইওনা আমারে” ৫৫পূ: ) । সাধুদের এই ভাবের উক্তির দুষ্টার্থ গ্রহণ করিয়া তাহাদিগকে দোষী বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে যাওয়া—নিতান্ত অন্যায়। গোবিন্দ মহাপ্রভুর প্রসাদ ছাড়া কিছু আহার করিতেন না—“প্রসাদ নহিলে মুই না করি ভক্ষণ” (৩, পৃঃ) তার অর্থ মহাপ্রভুর সঙ্গে সঙ্গে তিনিও বহু উপবাস কুরিয়াছিলেন। বগুলা বনে উভয়েই এইভাবে তিন দিন, তিন রাত্র উপবাস করিয়াছিলেন ( ২৯ পু: )। কিন্তু এই উপবাসে গোবিন্দ কষ্টবোধ করিতেন না। “ক্ষুধা তৃষ্ণা নাহি লাগে প্রভুর কৃপায়। সেই লাগি পড়ি থাকি যথায় তথায়।” ( ৫০ পৃ: ) যিনি চৈতন্তদেবের মুখখানি দেখিয়া ক্ষুধা তৃষ্ণ ভুলিয়। যাইতেন, তিনি কি পেটুক ? গোবিন্দ মহাপ্রভূর তিরোধান পৰ্য্যস্ত তাহার কাছে ছিলেন। চৈতন্ত চরিতামৃতের অস্ত্যখণ্ডে ১০ পঃ ২০৩১ শ্লোকে দেখা যায় গোবিন্দ ও স্বরূপ মহাপ্রভুর শেষজীবনের উন্মাদবস্থা দেখিয়া ভীত হইয়াছিলেন। তখন মহাপ্ৰভু সংসারে থাকিয়াও আর সংসারে ছিলেন না। তিনি রাধাকৃষ্ণ-লীলার অঙ্গীভূত হইয়া হৃদবৃন্দাবনবাসী হইয়াছিলেন। বাহিরের আর কোন কথাই তাহার কাণে পৌছায় নাই । অস্ত্যখণ্ডে ( ১৭ পঃ ৫ শ্লোক )
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।