bro গোবিন্দ দাসের করচা কেন করচ দীর্ঘকাল গুপ্ত ছিল ? দাক্ষিণাত্য হইতে ফিরিবার অব্যবহিত পরেই যদি গোবিদের মৃত্যু হইত, তবে তাহার পরিত্যক্ত জিনিষপত্র খোজ করার সময় করচা ধরা পড়িয়া যাইত এবং এরূপ মূল্যবান ইতিহাসের তখনই প্রচার হইত। যদি ফিরিয়া আসিয়া গোবিন্দ কাঞ্চননগরের গৃহে ফিরিতেন, তবে তাহার নিজকেও করচাকে গোপন করিবার আর কোনই কারণ থাকিত না । করচ, তাহা হইলেও প্রসিদ্ধি লাভ করিত। - একমাত্র যে কারণে এই পুস্তক গুপ্ত থাকিবার কথা, তাহা আমরা লিখিয়াছি। তিনি চৈতন্যদেবের চির সঙ্গী হওয়ার লোভে করচ, গোপন করিয়াছিলেন,—পাছে সেই সঙ্গচ্যুত হইয়া স্বগৃহে প্রত্যাগমন করিতে বাধ্য হন, এই আশঙ্কায় তিনি নিজের পরিচয় একেবারে লুপ্ত করিয়া থাকিবেন। মহাপ্রভুর জীবনের পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করিবার কোন প্রয়োজন গোবিন্স অনুভব করেন নাই। কারণ মহাপ্রভু পুরীতে ফিরিয়া বহু পণ্ডিত ও গুণী ব্যক্তি দ্বারা পরিবৃত হইয়াছিলেন, তাহারা তাহার জীবনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করিতে উদ্যোগী ছিলেন। গোবিনোর বাঙ্গলার সামান্তরূপ অক্ষর পরিচয় মাত্র ছিল । সুতরাং ইহঁাদিগের মধ্যে থাকিয়া তিনি লেখনী ধারণের স্পৰ্দ্ধা করেন নাই । বিশেষ তিনি যদি ইহার পরও লিখিতে থাকিতেন, তবে চৈতন্যপ্রভুর পরিকরদের মধ্যে তাহার করচ ও পরিচয় ধরা পড়িয়া যাইত। যে সময় মহাপ্রভূ বিরল-সঙ্গী, এবং বঙ্গদেশ হইতে বহুদূরে একাকী পৰ্য্যটন করিতেছিলেন, তখন গোবিন্দ দাস যে প্রয়োজন অনুভব করিয়াছিলেন, শেষে আর তাহা ছিল না । সুতরাং আমার মনে হয় প্রকাশিত করচা খণ্ডিত নহে। হয়ত ঐ পর্য্যস্ত লিখিয়াই গোবিন আর অগ্রসর হন নাই । তবে তিনি তাহার করচায় যে ডুরী বাধিয়াছিলেন, তাহা কে কতকাল পর খুলিয়াছিল, তাহা জানা যায় নাই । আমাদের কৈফিয়ৎ । আমার পুস্তক ও নিবন্ধমালার কেহ দোষ দেখাইলে আমি তৎক্ষণাৎ তাহা গ্রহণ করিয়া থাকি। ঐতিহাসিক আলোচনায় ভ্রমপ্রমাদ অবশ্বাস্তাবী। উত্তরোত্তর ভাষা ও সাহিত্যের শ্ৰী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন কালের ভুল সংস্কারগুলি সংশোধন করা বাঞ্ছনীয়। আমি ভুলগুলি আঁকড়াইয়া ধরিয়া নিজের জেদ বজায় রাখিব, এমন মতিচ্ছন্ন আমার হয় নাই। কিন্তু তথাপি এত ঢাক বাজাইয়া করচার ভুল ঘোষণা করা সত্বেও আমি বুঝিতে
পাতা:গোবিন্দ দাসের করচা.djvu/৮৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।